কাজিরবাজার ডেস্ক :
শ্রমিক-কর্মচারীদের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন-ভাতা ও আসন্ন ঈদ বোনাস প্রদানের জন্য আগের মতো সহজ শর্তে ঋণের দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএ।
এ সংক্রান্ত একটি আবেদন অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠিয়েছে এ সংগঠনগুলো। যার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব, অর্থমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর।
আবেদনটিতে স্বাক্ষর করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এবং বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
পোশাক শিল্পের এ তিন সংগঠনের পাঠানো এ আবেদনে বলা হয়েছে, ‘নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছর সচল রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে সহজ শর্তে ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করার জন্য আপনাকে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পোশাক শিল্পখাতের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। শ্রমিক-কর্মচারীদের এপ্রিল-মে-জুন-জুলাই, ২০২০ মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের ফলে এ শিল্পের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে এবং সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে।’
এতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে পোশাকশিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং এর প্রভাবে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আর্ন্তজাতিক স্বনামধন্য অনেক ক্রেতা নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করার ফলে তাদেরকাছ থেকে রফতানিকৃত পণ্যের বিপরীতে পেমেন্ট পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ক্রেতা কর্তৃক ক্রয়াদেশ বাতিল/স্থগিত ও নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না পাওয়ার ফলে পোশাকখাত নিদারুণ আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব বাজারে রফতানি সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের পোশাকশিল্প অন্যান্য দেশের তুলনায় হ্রাসকৃত মূল্যে পোশাক রফতানি করে থাকে যার মধ্যে মুনাফার অংশ খুবই কম থাকে, টিকে থাকার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোকসান দিয়েও ক্রয়াদেশ নিতে বাধ্য হয়। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যয় পরিশোধ করা হতো ক্রেতার কাছ থেকে পেমেন্ট পাওয়া এবং নগদ সহয়তা বাবদ প্রণোদনার অর্থ প্রাপ্তির পর। কিন্তু রফতানিমূল্য প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে নগদ সহায়তার আবেদনও করতে পারছে না। আবার অনেক ক্রেতা ডিসকাউন্ট হারে মূল্য পরিশোধ করছে। যার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকট নিরসন করতে পারছে না।’
পোশাক শিল্পের এই তিন সংগঠন বলেছে, ‘করোনা প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে হ্রাস হবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে এটাই সকলের কাম্য ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পুনরায় শুরু হয়েছে করনোর দ্বিতীয় ঢেউ। বিশ্বের অনেক দেশেই পূর্বের ন্যায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে যেসব ক্রেতা পেমেন্ট দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল তারাও পেমেন্ট দিতে অপরাগতা প্রকাশ করছে।’
আবেদনে বলা হয় ‘এমতাবস্থায় আসন্ন ঈদে সচল কারখানাগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বোনাস প্রদানের জন্য রফতানিকারকদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। উদ্যোক্তাদের আর্থিক সংকটের কারণে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধের জন্য অর্থের যোগান দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে রফতানিনিমুখী পোশাক শিল্পকে সহায়তা করার নিমিত্তে শ্রমিক-কর্মচারীদের এপ্রিল, মে ও জুন, ২০২১ মাসের বেতন-ভাতা ও বোনাস প্রদানের জন্য পূর্বের ন্যায় সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা একান্ত আবশ্যক।’
এতে আরও বলা হয়, ‘উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বে অতিমারি রূপ ধারণ করেছে। এ ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা করে শিল্প বাণিজ্যকে টিকিয়ে রাখতে ইতোমধ্যেই বিশ্বের উন্নত-অনুন্নত সব দেশ আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একাধিকবার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা পূর্বক বাস্তবায়ন করেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি পোশাক ও বস্ত্রখাতের রফতানি বাণিজ্যের সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এবং আসন্ন ঈদে শ্রম-অসন্তোষ রোধে এবং আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের এপ্রিল, মে ও জুন ২০২১ মাসের বেতন-ভাতা ও বোনাস প্রদানের জন্য পূর্বের ন্যায় একই শর্তে ঋণ হিসেবে অর্থের যোগান দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বস্ত্রখাতের তিনটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।’