কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাহে রমজানের আজ ১২তম দিবস। করোনা দুর্যোগেও সিয়াম সাধনায় মশগুল মুমিন মুসলমানরা। এমন দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজেকে এবং পরিবার সমাজকে সুস্থ রাখাই বড় কথা। যেসব কারণে মানুষ অসুস্থ হতে পারে ইসলামী শরিয়ত সেসব থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে। তাই ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক নির্দেশিত স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলা ও অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেয়া প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জরুরী।
১. খাদ্য পানীয় মানুষের রোগব্যাধির অন্যতম কারণ। হাদিস শরিফে আছে : পেট সব রোগের কেন্দ্রস্থল। ইসলামে এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুৎসাহিত করেছে। সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কুরআনে আছে, তোমরা খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (আরাফ: ৩১)। হাদিস শরিফে আছে রাসূলে কারীম (স.) বলেছেন, পেটের এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য, এক তৃতীয়াংশ শ^াস-প্রশ^াসের জন্য খালি রাখবে।’ (সূনানে ইবনে মাজা, ৩৩৪৯) রাসূল (স.) কখনও পেটপুরে খেতেন না। পরিমিত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হলে সব ধরনের রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২. খাদ্যদ্রব্য সবসময় ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফু দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এতে রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, খবরদার! পানিতে ফু দিয়ো না। (তিরমিজি)।
৩. খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধৌত করার প্রতি ইসলামে নির্দেশ রয়েছে। কারণ হাতে বিষাক্ত থাকায় রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৪. শরীর সরল ও সতেজ রাখার জন্য শরীরচর্চামূলক খেলাধুলা, ব্যয়াম ও সাঁতার কাটা প্রভৃতির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরী। ইসলামে অলসতাকে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়েছে। হাদিস শরিফে রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি উৎকণ্ঠা থেকে, মনোকষ্ট থেকে, অলসতা থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, ঋণগ্রস্ততা থেকে ও মানুষের কর্তৃত্বাধীন হয়ে যাওয়া থেকে। (বুখারী ৩/১০৫৯)
৫. দৈহিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও জরুরী। বরং মানসিক সুস্থতা দৈহিক সুস্থতার পূর্বশর্ত। কারণ মানসিক প্রশান্তি ও উৎফুল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের রোগ প্রতিরোধ কমিয়ে ফেলে। তাই ইসলামে মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে বৈবাহিক জীবন ব্যবস্থার প্রতি খুব গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ইসলামে ইবাদত ব্যবস্থাও জিকির আজকারের দ্বারাও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন : জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়। (সূরা রাদ ২৮)।
৬.পরিষ্কর-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা ও ইমানের অঙ্গ। পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতিও ইসলামে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরিবেশ দূষণের কারণে মানবসমাজে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। হাদিস শরিফে আছে : রাসূলে কারীম (স.) ইরশাদ করেনÑ তোমরা তোমাদের বাড়ির আঙ্গিনা সব দিকে পরিষ্কার রাখবে। ইহুদীদের অনুকরণ কর না। তারা বাড়িতে আবর্জনা জমা করে রাখে। (সূনানে তিরমিজি-২৭৯৯) তা ছাড়া কেউ যদি মেসওয়াক, অজু, গোসল, পোশাক-আশাক প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইসলামী নির্দেশনা মেনে চলে তাহলে সে অপরিচ্ছন্ন রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে।
৭. যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাতে রোগব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে : রাসূলে কারীম (স.) ইরশাদ করেনÑ তোমরা তিন অভিশপ্ত ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাক, যে পানির ঘাটে, রাস্তার ওপর ও গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে। (সূনানে আবু দাউদ-২৬)।