করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থায় পড়ে খেটে খাওয়া মানুষের নিত্য জীবন। রুজি-রোজগার কমে যাওয়া থেকে আরম্ভ করে চাকরি হারানোর মতো দুর্ভোগ পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা একটি নিয়মিত ও প্রাসঙ্গিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই থাকে না। ফলে প্রতিদিনের জীবন কাটাতে তাদের দৈনন্দিন শ্রমমজুরিই একমাত্র সম্বল। সেখানে করোনার আঘাতে সাধারণ শ্রমজীবীদের যে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি তা সামলাতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সহায়তা এবং প্রণোদনার অর্থ সরবরাহ করে উপস্থিত বিপর্যস্ততা মোকাবেলা করতে হয়েছিল। এবারও সেই মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় করোনার চরম সংক্রমণ দেখা দিলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াই নয়, আরও ভয়ানকভাবে মৃত্যুর হার উর্ধগতির কারণে সরকার পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে লকডাউনের মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে। সঙ্গত কারণেই এবারও সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ার আশঙ্কায় সেই হতদরিদ্র পরিশ্রমী মানুষগুলোর। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে এবারও বড় সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কায় সাধারণ দিনমজুর- যাদের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া লকডাউনের সময়-পরিধি কতদূর যাবে তাও অনিশ্চয়তার আবর্তে। যার চরম প্রভাব বর্তাবে অর্থনীতির প্রয়োজনীয় খাতগুলোতে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের নিত্য জীবনেও নেমে আসবে এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। যার মাশুল গুনতে হবে জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হেভেন ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অবরুদ্ধতার নির্মম পেষণে সবচেয়ে লোকসান গুনতে হয় গরিব মানুষদেরই। সুতরাং তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেয়া দেশের স্বার্থেই জরুরী। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের কি অবস্থা দাঁড়াবে তা অনুমান করা কঠিন নয়। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির কৌশল ঠিক করতে হবে। উপস্থিত চলাচলের ওপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তা প্রযুক্তির বলয়ে গতিশীল রাখার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করাও সময়ের দাবি। তা ছাড়া স্থানীয় সরবরাহ ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন ও বৈজ্ঞানিক প্রয়োগকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সম্প্রসারিত করাও নিতান্ত আবশ্যক। গত লকডাউনে বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ, এমন সূচকেই অনেক মানুষের রুজি-রোজগারের পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল লকডাউনের এই সময়ে, তাদের সুরক্ষা দিতে শুধুমাত্র খাদ্য সহায়তা নয় বরং নগদ অর্থ সাহায্য প্রদানও বিশেষ জরুরী। এবার ঈদের আগে ৩৬ লাখ পরিবারকে দেয়া হবে আড়াই হাজার করে নগদ টাকা। এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাড়ে ৯শ’ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সফলভাবে করোনার প্রথম ঢেউ সামলিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল করেছে। বর্তমানে টিকাদান কর্মসূচী তেমন সম্ভাবনার আর এক নিদর্শন। তারপরও আসন্ন সঙ্কট নিরসনে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়াও সময়ের দাবি।