স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে দমন করতে হবে

15

দেশ ও জাতির অব্যাহত দাবির মুখে অবশেষে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি ’৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক এক ওয়েবিনারে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও সন্ত্রাসের অভিযোগে মামুনুল-বাবুনগরীসহ হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি উঠেছে। এর জের ধরেই সর্বশেষ কেন্দ্রীয় নেতা কুখ্যাত মামুনুল হককে রবিবার গ্রেফতার করে সোপর্দ করা হয় আদালতে রিমান্ডের জন্য। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরও করেছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এই নেতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য ও নারী কেলেঙ্কারিসহ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ, সন্ত্রাসী কর্মকা-, ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে এ পর্যন্ত অন্তত ৩২০ হেফাজত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এর বাইরেও গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের কয়েক নেতাকে হেফাজতকে মদদ দেয়ার অভিযোগে। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে ২০১৩ সালের রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে সরকার পতন তথা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ। সরকারের এই হার্ডলাইনে যাওয়ায় ইতোমধ্যে জনমনে নেমে এসেছে স্বস্তি।
সরকারের বিরুদ্ধে আবারও মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আর এর পেছনে রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলাম। মূলত হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা আল্লামা শফীর মৃত্যুর পরই আলাদা হয়ে যায় হেফাজতে ইসলাম। সম্প্রতি আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগে বাবুনগরীসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। জামায়াতে ইসলামের দখলে চলে গেছে হেফাজত। এখন দলটির নেতৃত্বে যারা আছে তারা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী। এবার তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের নানা উৎসব-অনুষ্ঠান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আসার বিরোধিতা ইত্যাদিকে ইস্যু করেছে। এসবের প্রতিবাদে তারা সংঘবদ্ধ ও সশস্ত্র হয়ে হাটহাজারী থানা আক্রমণ করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল স্টেশনে হামলা ও আগুন জ্বালিয়েছে; ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ দখল করে পুলিশ-জনতা ও সাংবাদিকদের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে, সর্বোপরি যাত্রাবাড়ী ও মালিবাগে সড়ক অবরোধ করে আগুন দিয়েছে বাসে। এর আগে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লার হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক হামলা এবং বিভিন্ন স্থানে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়ার পেছনেও কাজ করেছে হেফাজত নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য। সাম্প্রতিক হামলায় কয়েকজন নিহত, শতাধিক আহতের খবরও আছে, যাদের মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিক। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে তারা শাপলা চত্বরের মতো ব্যাপক সহিংস সমাবেশ এবং জ্বালাও-পোড়াও পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেক্ষেত্রে হেফাজত-জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।