আতিকুর রহমান মাহমুদ ছাতক থেকে :
ছাতকে বহুল প্রত্যাশিত সুরমা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি দৃশ্যমান। কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। চলতি বছরেই সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সেতুটি উদ্বোধন হলে সুরমার উত্তরের মানুষের মাঝে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। সীমান্তবর্তী ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা মানুষের যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।
জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৩ আগষ্ট তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে ছাতক পৌরসভার শ্যামপাড়া এলাকা থেকে সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরে ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ৩ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে নদীর দু’পারে সেতুর পিআর ৪টি ও দক্ষিণ পারে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ শেষে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সেতুটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর পর প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বাদ দেয়ায় অনেকটাই সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জমি অধিগ্রহণ, বাজেট স্বল্পতা, সেতুর উচ্চতাসহ বিভিন্ন জটিলতায় সেতুটির নির্মাণ কাজ বছরের পর বছর বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন ছাতক-দোয়ারাবাসী দেখে আসছিলেন সেতুর দু’পারের পিলারগুলো। পরে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে এ সেতুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি সংশোধিত নতুন প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অমুমোদনের জন্য পাঠায়। এ আবেদনটি বিশেষ বিবেচনায় এনে ১১২ কোটি ৯৯ লাখ ৪৯ টাকার পুন:সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে। ২০১৬ সালের জুনে মহান জাতীয় সংসদে সুরমা সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক দাবী জানালে ওই বছরের আগষ্ট মাসে পরিকল্পিত এপ্রোচ ও নেভিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সেতু নির্মাণে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক’র সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত হওয়ার পর আশার আলো দেখে ছাতক-দোয়ারাবাসী। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জন-জেবি নামের যৌথ এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবারও শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। ফলে দু’পারের মানুষ আবারও স্বপ্ন দেখে সেতুর। এ স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
সব কিছু ঠিক-টাক থাকলে স্বপ্নের সেতুটির কাজ সমাপ্তি করে চলতি বছরেই উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এর মাধ্যমে দু’পারের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায় হবে।
সেতু নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা ছাতক সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সেতু নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করণ প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হয় কাজ। সেতু নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ, চায়না থেকে সেতুর স্ট্রিল স্ট্রাকচার ক্রয়, আমদানি ও স্থাপনে ১৬ কোটি ৫০ লাখ, এগুলোর কাষ্টম ভ্যাট ১২ কোটি, আধুনিক টোল প্লাজায় ১৯ কোটি ৪৬ লাখ, রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং এ ১ কোটি ৩০ লাখ, ২টি আরসিসি আন্ডারপাস এবং ৮টি কালভার্ডে ৪ কোটি ২৮ লাখসহ বাকী টাকা মূল সেতু ও আড়াই কিলোমিটার সেতুর এপ্রোচ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেতুসহ এপ্রোচের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। কিন্তু সেতুর দক্ষিণ ও উত্তর পারে দু’টি বিল্ডিং এ তাদের অংশিদার জটিলতায় এপ্রোচের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণের ফলে সুরমা নদীর দক্ষিণ পারের মানুষের কোন কাজে আসবেনা। সেতুর দক্ষিণ পারের এপ্রোচ অংশে ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কের সাথে সংযোগ নেই। এখানে জিরো পয়েন্ট স্থাপিত না হলে সিলেট থেকে বিভাগীয় শহর থেকে সরাসারি ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কে যাতায়াতে ৫ কিলোমিটার দূরত্বের সৃষ্টি হবে। আবার ছাতক-দোয়ারা ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন নিয়ে চলতে গেলে সুরমার উত্তর পারের মানুষও পড়তে হবে এ ভোগান্তিতে। সেতুর দক্ষিণ পারে জিরো পয়েন্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।