কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাজেটকে সামনে রেখে জ্বালানির ভর্তুকি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণ করে অর্থ বিভাগকে জানাতে যাচ্ছে বিদ্যুত ও জ্বালানি বিভাগ। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। ভবিষ্যতে ভর্তুকির প্রয়োজন হবে কি না, প্রয়োজন হলেও কতটা হবে এ বিষয়ে তা নির্ধারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে সরকার বাজেটে সরাসরি বিদ্যুত জ্বালানির ভর্তুকির বিষয়টি উল্লেখ করত। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুত এবং জ্বালানির উন্নয়ন এবং সহায়তায় বেশ কয়েকটি তহবিল গঠন করে। এই তহবিল থেকে বিভিন্ন সময়ে এই দুই খাতের উন্নয়নে যেমন টাকা দেয়া হয় তেমনি ভর্তুকিও দেয়া হয়। আবার অর্থ বিভাগ থেকে বিদ্যুত এবং জ্বালনিতে ভর্তুকির নামে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তাও ঋণ হিসেবে দেয়া হয়। ফলে সরাসরি এই অর্থকে ভর্তুকি হিসেবে দেখানো হয় না।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে এর আগে বিপিসি লাভ করলে আমরা এখান থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ দিয়েছি। ফলে অর্থ বিভাগ থেকে যে অর্থ দেয়া হয় তা ভর্তুকি না ঋণ সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যদিও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে একে বরাবর ভর্তুকি হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ভর্তুকি হিসেবে দিলে সেটিকে কেন ঋণ হিসেবে দেখানো হয় এটি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এরপরও সরকারের তরফ থেকে গতবছর জাতীয় সংসদে জানানো হয়, গত ১০ বছরে সরকার বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি দিয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগের একজন শীর্ষ ব্যক্তি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমাদের কাছ থেকে সরকার কর, ভ্যাট বাবদ যে অর্থ নিয়ে যায় তার বিপরীতে খুব কমই আমাদের দেয়া হয়। বিদ্যুত বিলে ভ্যাট নেয়া হয়, প্রতি লিটার তেল বিক্রিতেও কর নেয়া হয়। একইভাবে গ্যাস বিক্রিতেও কর আছে। এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট আছে। সঙ্গত কারণে আমরা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যে অর্থ জমা দেই তার সামান্যই আমাদের উন্নয়ন ও ভর্তুকিতে বরাদ্দ দেয়া হয়।
সম্প্রতি জ্বালানি সচিব আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভর্তুকি নীতিমালা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। ওই বৈঠকে জানানো হয়, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন নীতিমালায় জ্বালানিখাতে ভর্তুকির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি ইন্ডিকেটর রয়েছে। সেই ইন্ডিকেটরটি চূড়ান্ত করে অন্তর্ভুক্ত করতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে আগামী ২০২৫ অথবা ২০৩০ সাল নাগাদ ভর্তুকি লাগবে কি না, ভর্তুকির বিপরীতে একটি রিয়েলটাইম ডাটার এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) তৈরি এবং একটি ভর্তুকি নীতিমালা করে দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইআরপি হচ্ছে সম্পদ পরিকল্পনা সফটওয়্যার। বড় বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে। বিদ্যুত-জ্বালানিতে সরকার ইআরপি বাস্তবায়ন করছে। এতে সম্পদের হিসাব রাখা সহজ হয়। এবার ভর্তুকি নির্ধারণেও এটি কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।