স্টাফ রিপোর্টার :
হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সারা দেশের ন্যায় সিলেটে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। ট্রেন ও দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। গতকাল রবিবার ভোর থেকে শুরু হয়ে এ হরতাল চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। নাশকতা এড়াতে সিলেট নগরীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী কঠোর সতর্ক অবস্থানে ছিল। হামলা ও ভাঙচুরের ভয়ে ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট, বিপণিবিতান বন্ধ রাখেন।
তবে কিছু কিছু স্থানে হেফাজত-ছাত্রলীগ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও ধরপাকড়ের ঘটনাও ঘটে। এছাড়া মহানগরীর ৬ থানার এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও র্যাব।
জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে হরতাল পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও দুপুর থেকে কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। ভোর থেকেই সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। নগরীর প্রতিটি প্রবেশ পথে যান চলাচলে বাঁধা দেয় হেফাজত কর্মীরা। এসময় তাদের হাতে বাঁশ, রডসহ ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় হেফাজত সমর্থককের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ কর্মী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। সকাল ৯টার দিকে দক্ষিণ সুরমায় ক্বিন ব্রিজের মুখে লাঠিসোটা হাতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে তাদের লাঠি কেড়ে নিয়ে ছাত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
সূত্র জানায়, সকালে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয় হেফাজতকর্মীরা। সেখানে সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। কোর্ট পয়েন্ট-চৌহাট্টা সড়কে মিছিলও করে হেফাজত। সকাল ১১ টার দিকে বন্দরবাজার এলাকার জেলা পরিষদের পাশে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথক মিছিল নিয়ে এই স্থানে এসে জড়ো হন। পরে দুপুরে বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও শোডাউনে ওই এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। এসময় হেফাজত নেতাকর্মীদের সাথে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে বন্দরবাজার এলাকায় শিবির নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগ। এসময় দুই পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। তখন নগরীর কালিঘাটে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরাও জড়িয়ে পড়েন। এসময় তিন দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ছাড়া নগরীতে হরতাল চলাকালে আর কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বলেন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এরা সবাই শিবির কর্মী। এছাড়া কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানতে পারিনি। তিনি বলেন, হেফাজতের কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবেই অবস্থান নিয়েছিলো। তবে দুপুরের দিকে শিবির মাঠে নেমে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের প্রতিহত করেছে।
মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, হেফাজতের হরতাল চলাকালে কেউ যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে জন্য সতর্কাবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি বলেন, সিলেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করে।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফর রহমান বলেন, সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন সবগুলো থানাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ ছিল। জেলাজুড়ে সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকায় কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।