ওবায়দুল মুন্সী :
অসংখ্য শহিদের আত্মত্যাগ ও মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি স্বাধীনতার মহানায়ক আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব ও সংগঠকদের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেসব ভারতীয় সেনা এই মাটিতে জীবন দিয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন, তাদের প্রতিও বিন¤্র শ্রদ্ধা। যাদের সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা চিত্তে স্মরণ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আরেকবার শপথ নিতে চাই, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বেবুকে মাথা উঁচু করে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে দাঁড় করাবোই।
বঙ্গবন্ধুর হাতেই ছিল দেশ মুক্তির চাবি!
৭ মার্চের ভাষণ ও ২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণায় তারই প্রমাণ পাওয়া যায়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে, ত্রিশ লক্ষ শহিদের আতœবিনাশে মুক্তির ভূখন্ডে আমরা পেলাম স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষিতে আজ দারুণ সাফল্য এসেছে,ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাক্সিক্ষত পথে আমার প্রিয় সোনার দেশ বাংলাদেশ। শিল্প-সংস্কৃতি উন্নতিতেও আমাদের লক্ষ্যের বিচ্যুতি হয়নি। ধাপে ধাপে এগিয়ে দেশটি আজ শক্তিমান হয়ে ওঠেছে।
স্বাধীনতা বিরোধীরা এদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নামটি চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের জনাকাক্সক্ষা, জন প্রত্যাশার বিপরীত মুখে হেঁটেছিল। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, এমন কি ‘৭৫ সালে সপরিবারে হত্যার বিচার আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল। একই সাথে গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, মানবাধিকার অর্থনৈতিক সাম্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আমাদের যৌথ স্বপ্ন ছিঁড়ে দিয়েছিল মুষ্টিমেয় স্বাধীনতা বিরোধী,পাকিস্তানের পরাজিত শত্রু, কতিপয় উচ্চবিলাসী ও বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার নৃশংসতায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা এ সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির জনকের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে। একই সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বৈষম্যহীনতার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তাও আজ হাতের মুঠোয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দৃশ্যমান অর্জনও করেছে। ইতোমধ্যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকেই বয়ে বেড়ানো ‘স্বল্পোন্নত’ তকমা ঝেড়ে ফেলাও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। একদা বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ ছাড়া মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন অকল্পনীয় ছিল। এখন আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো বড় বড় মেগা প্রকল্পসহ প্রমত্ত পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতার জয়গান গাইছে। বিচারহীনতার এক নিকষ আঁধার আমাদের ঘিরে ধরেছিল। জাতির পিতা হত্যারই বিচার হবে না- খোদ সংবিধানে এমন ধারা সংযোজিত হয়েছিল। এ দেশের স্বাধীনতার যারা বিরোধিতা করেছে, বিদেশি প্রভুর আজ্ঞায় দেশের মা- বোন-ভাইয়ের ওপর যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; তাদেরও বিচারের দাবি গুমরে গুমরে কেঁদে ফিরেছে। আমরা দেখছি, ইতোমধ্যে নেতৃস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। অন্যরাও প্রায় পাঁচ দশক পরে হলেও কৃতকর্মের শাস্তির দিন গুনছে। কেবল দেশের অভ্যন্তরে নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী,অনেক বেশি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।
বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল ও সম্ভাবনার অপার বিস্ময়কর একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলাম; আর এখন বাংলাদেশই হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য ও নির্ভয়ে জীবনযাপনের জোগানদাতা। এর আগে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বিশ্ব প্রচার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ তথা মানবতার জননী খেতাবে ভূষিত করেছে। ১৭ মার্চ থেকে বর্ণাঢ্য আয়োজন পরিকল্পনা
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ মিলে ১০ দিনব্যাপী জমকালো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এসব অনুষ্ঠান হবে। এর মধ্যে বড় দুটি অনুষ্ঠান হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, জাতীয় শিশু দিবস ১৭ মার্চ এবং অন্যটি স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর প্রায় ৩ মাসেরও বেশি সাধারণ ছুটি ছিল। সে কারণে পরিকল্পিতভাবে মুজিব শতবর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ অন্য কোনো বড় অনুষ্ঠান কোথাও হয়নি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনের ফলে করোনার ভীতি কাটিয়ে আবার ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুখর হয়ে ওঠবে আমাদের প্রিয় সোনার দেশ। পরিকল্পনামতে, রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের সবগুলো জেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা,উপজেলা ও ইউনিয়নে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২৬ মার্চ বর্ণিল সাজে সেজে উঠবে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। জমকালো এসব অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও অনেক সম্মানিতজন উপস্থিত থাকবেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেডিসন স্কয়ারে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর একমাত্র জীবিত শিল্পী বব ডিলান। বিদেশিদের মধ্যে যাঁরা ঢাকায় আসতে পারবেন না তাঁদের ভিডিও বার্তা সংগ্রহ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রচার করা হবে।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস থেকে শতবর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। অনুষ্ঠান চলার সময় নির্ধারিত ছিল ২০২১ সালের ২৬ মার্চ, অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে পরিকল্পিত উপায়ে মুজিব শতবর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ বড় অনুষ্ঠানগুলো হয়নি। সে কারণে মুজিব শতবর্ষের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ১০ দিনের বড় অনুষ্ঠান করে জাতির পিতা এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছে সরকার। এর বাইরে বছরব্যাপী মুজিববর্ষের অন্যান্য অনুষ্ঠানও পালিত হবে।
২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শক্তি আর উদ্দীপনায় আমরা সব সংকট কাটিয়ে দেশকে উন্নয়নে এগিয়ে নিয়ে যাবো এই হোক আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের প্রত্যাশা।