দেশে মহামারি করোনার কারণে এবারে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে সকল প্রকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষে মাত্র ৫ জনের মধ্যে সীমিত লোকজন শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্যে বলা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ৬৮ বছর পর আবার ঘুরে এসেছে ৫২ এর ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এদিন বাঙালি জাতির মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ভাষা বিরোধী সরকারের কার্ফুকে ভাঙ্গতে গিয়ে বাংলা ভাষার জন্যে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ ভাসিয়েছিলেন বীর বাঙালি সন্তান সালাম, বরকত, জব্বার সহ অসংখ্য বাঙলা মায়ের সন্তান। তাদের স্মৃতিমাখা আন্দোলন সংগ্রামের রক্তের উপর শপথের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ও এখন সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। এখন ও বাংলা ভাষা বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত থেকে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা থেকে রেহাই পায়নি। এখনও বাংলা বিরোধী চক্রের হাত থেকে দেশ মুক্ত হয়নি।
মহান ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পথ ধরে দেশে যত আন্দোলন- সংগ্রাম হয়েছে, তা বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানি শাসক ও শোষকদের হাত থেকে রক্ষায় বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর উপর দেশ বিভক্তির পর থেকে বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা হিসাবে পরিচিতি লাভ করায় এবং তৎকালীন মুহূর্তে বাঙালি জাতির আলাদা একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য থাকায়, এদেশীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির দেয়া আগরতলা মামলাসহ হুলিয়া, জেল-জুলুম, জীবনের অধিকাংশ সময়ে কারাগারে জীবন যাপন করতে হয়েছে। ৭০ এর নির্বাচনে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঐক্যবন্ধ হয়ে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে মাত্র নয় মাসের মধ্যে দেশ স্বাধীন করে। দেশ-স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যদিও সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন শুরু হয়। বাঙালি জাতি ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে গর্বিত, আরো গর্বিত যে এ দেশের মানুষ দল-মত, ধর্ম-বর্ণ সকল নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে ৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি আসার পূর্ব থেকে ভাষা দিবস ও ভাষার জন্যে যে বীর ভাষা সৈনিকদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বাংলা অক্ষরে অঙ্কিত নানা ধরনের বর্ণ দ্বারা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ রঙিতকরণের কাজ। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত খুব ভোর রাত থেকে ফুলের তোড়া নিয়ে খালি পায়ে সুশৃংখল ভাবে লাইন ধরে হেঁটে-হেঁটে মধুর স্বরে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” এ গান গেয়ে-গেয়ে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়ে থাকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। যা যুগ-যুগ ধরে আসলে ও সর্বত্র, পবিত্র শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে দৃঢ়তার সহিত শপথ গ্রহণ করেন সর্বত্র মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠা লড়াই চলবে। সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন করব। কিন্তু দিনটি পেরিয়ে গেলে আমরা আমাদের শপথ নামার কথা ভুলে যাই। আজও সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি।
এবারের ভাষা শহীদের শপথ হউক সর্বত্র বাংলা ভাষা চালুসহ মুক্তিযুদ্ধের আর্দশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের শপথ। যা সকল বাঙালির প্রত্যাশা।