ভারতে কৃষক বিক্ষোভ ॥ বিক্ষোভকারী কৃষকদের সাথে সরকারকে সংলাপের আহবান যুক্তরাষ্ট্রের

17

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলনে বিক্ষোভরত কৃষকদের সাথে সংলাপের মাধ্যমে দেশটির সরকারকে সংকটের সমাধানের আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ দিকে, ভারতীয় কৃষকদের এই আন্দোলনে মার্কিন পপতারকা রিহান্না ও সুইডিশ কিশোর পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গের সর্মথনসূচক টুইটের পাল্টা জবাবে শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহেলি, কঙ্গনা রানাউতের মতো ভারতীয় তারকারা সরকারের সমর্থনে টুইট করেছেন।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র লিখিত বিবৃতি পাঠ করে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে যেকোনো উঠতি গণতন্ত্রের নিদর্শন হিসেবে আমরা স্বীকৃতি দেই এবং আমাদের জানা মতে, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টও একই স্বীকৃতি দিয়েছে।’
এতে আরো বলা হয়, ‘বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যেকোনো মতপার্থক্য সমাধানে আমরা সংলাপকে উৎসাহিত করি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় বাজারের কার্যকারিতা বাড়াতে ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আকর্যণে যে কোনো পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা ইন্টারনেটসহ তথ্যের অবাধ প্রবাহকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ক্রমবর্ধমান গণতন্ত্রের নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি দেই।’
এর আগে ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ ফেব্রুয়ারি সমর্থনসূচক টুইট করেন মার্কিন পপ তারকা রিহান্না। ওই টুইটে কৃষক আন্দোলনে সিএনএন-এর একটি সংবাদ শেয়ার করে তিনি লিখেন, ‘আমরা কেন এই বিষয়ে কথা বলছি না?’
১০ কোটি ১৩ লাখ অনুসারী রিহান্নার ওই একাউন্টের টুইটটি বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন লাখ ১৯ হাজারের বেশি রিটুইট করা হয়েছে। সাত লাখ ৬০ হাজারের বেশি ব্যবহাকারী এতে লাইক দিয়েছেন।
রিহান্নার অনুসরণে সুইডিশ কিশোর পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভাতিজি মিনা হ্যারিসসহ আন্তর্জাতিক তারকা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভারতের কৃষক আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়েছেন।
গ্রেটা তার টুইটে বলেন, তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের আন্দোলনকারী কৃষকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিহান্না ও গ্রেটার এমন টুইটের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ওইসব সেলিব্রটিদের উচিত এ বিষয়ে ‘একটি সঠিক বোঝাশোনা’।
এ দিকে, কৃষক আন্দোলনে রিহান্না ও গ্রেটার সমর্থনসূচক টুইটের জবাবে ভারতীয় সরকারের পক্ষে সমর্থনসূচক টুইট করেছেন শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, কঙ্গনা রানাউত ও লতা মুঙ্গেশকরের মতো তারকারা।
শচীন টেন্ডুলকার বুধবার তার টুইট বার্তায় বলেন, ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। বাইরের লোকেরা দর্শক হতে পারে, কিন্তু অংশগ্রহনকারী হতে পারে না।’
টুইট বার্তায় তিনি আরো বলেন, ‘ভারতীয়রা ভারতকে জানে এবং তারাই ভারতের জন্য সিদ্ধান্ত নেবে। জাতি হিসেবে আমরা এক থাকি।’
হ্যাশটাগে তিনি ভারতের এক থাকার ও ভারতের প্রোপাগান্ডার বিপরীতে থাকার কথা জানান।
বিরাট কোহলি তার টুইট বার্তায় লিখেন, ‘দ্বিমতের সময়টায় সবাই এক থাকি। কৃষকরা দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমি বিশ্বাস করি সব দলের মধ্যে শান্তি বজায় ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটা পথ বের হবে।’
বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত রিহান্নার টুইটের জবাবে বিক্ষোভকারী কৃষকদের ‘সন্ত্রাসী’ ও রিহান্নাকে ‘বোকা’ মন্তব্য করে একটি টুইট করেন। পরে টুইটার কর্তৃপক্ষ ওই টুইটটি সরিয়ে নেয়।
অপরদিকে কিংবদন্তী ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর ভারতের এক থাকার ও ভারতের প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে থাকার হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এক টুইট বার্তায় বলেন, ভারতের যেকোনো সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার সামর্থ দেশটির রয়েছে।
রিহান্নার টুইটের পাল্টা জবাবে অনুপম খের, অক্ষয় কুমার, করন জোহর, সুনীল শেঠীসহ অন্য তারকারাও টুইট করেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের প্রস্তাবিত নতুন কৃষি সংস্কার আইন লোকসভায় পাস হলে ভারতজুড়ে কৃষকরা বিক্ষোভ শুরু করে। কৃষকরা বলছেন, এই আইনের ফলে তারা বড় পুঁজিপতি কোম্পানিগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়বেন।
গত ২৬ নভেম্বর থেকে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার কৃষক রাজধানী নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে জড়ো হয়ে কৃষি আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছে।
শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসা এই বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে গত ২৬ জানুয়ারি, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানী নয়াদিল্লিতে কৃষকদের এক র্যা লি থেকে পুলিশের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কিছু কৃষক ভিন্ন রাস্তায় গিয়ে ঐতিহাসিকল লালকেল্লা দখল করে তাতে শিখ ও কৃষক সংগঠনগুলোর পতাকা উড়ায়।
ওই সহিংসতায় এক বিক্ষোভকারী নিহত ও পুলিশসহ শত শত লোক আহত হয়েছে।
সহিংসতার নিন্দা জানালেও কৃষক নেতারা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ বন্ধ করবেন না।
সহিংসতার ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের অবস্থানের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং বিভিন্ন প্রদেশের সাথে দিল্লির সীমান্তে লোহার তারকাঁটা ও ইস্পাতের ব্যারিকেড বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ আটকে দিয়েছে। পাশাপাশি সরকার বিক্ষোভকারীদের অবস্থানস্থলে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।