জেড.এম. শামসুল :
আজ ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলা রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রক্তাক্ত আন্দোলন সংগ্রামের বেয়ে আসার দিন। ১৯৫২ সালের ঐদিনে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে তার বাসভবনে পূর্ববঙ্গ কর্মশিবির অফিসে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় ২১ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত এবং ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারী পতাকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাংলা রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দিনে দিনে এগুতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সাথে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ২৭ নভেম্বর ৪৮ বৈঠক হলেও কোন ফলপ্রসূ জবাব না পাওয়ায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাস পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর অনুধাবন করতে দেবী হয়নি, তাই তারা নানা কৌশলে বাংলা ভাষার স্থলে উর্দ্দু প্রবর্তনের কলাকৌশল প্রয়োগ করতে থাকে। তারা বাংলা হরফের স্থানে কখনো উর্দ্দু আবার কখনো রোমান হরফে লেখার প্রচেষ্টা চালায়। এরূপ প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ চালানো হয়। শুধু তাই নয় বাংলাভাষা ও বাঙালি জাতিকে দমিয়ে রাখতে ১৯৪৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর করাচিতে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষক সম্মেলনে পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান বাংলা ভাষা আরবী হরফে প্রবর্তনের চেষ্টা করলেও তাদের প্রচেষ্টা বিফলে যায়। পূর্ববঙ্গের ছাত্র-জনতার আন্দোলন উত্তপ্ত হতে থাকে। দেশ বিভাগের সাথে সাথে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি জাতি আন্দোলন শুরু করে ১৯৪৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে, বিদেশী শোষকগোষ্ঠী প্রথম পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বাংলা ভাষা বাদ দিতে গিয়ে ধরা পড়ে বাঙালি সচেতন মহলের কাছে। এ চক্রন্ত প্রতিরোধ করতে গিয়ে বাঙালি জাতি গড়ে তোলে প্রতিরোধ আর আন্দোলন সংগ্রাম। এ ব্যাপারে ১০ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ সহ গড়ে উঠে বাংলা রাষ্ট্রভাষা পরিষদ। তমদ্দুন মজলিশ এবং বাংলাভাষা প্রচার তহবিল গঠন। এ তহবিলে অনুদান প্রদানের জন্যে প্রচারপত্র বিতরণ। এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী তমদ্দুন মজলিশের রাষ্ট্রভাষা সাব কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মন্ত্রীদের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা বাংলা নিয়ে অনেক দেন দরবার হয়। এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে ব্যাপক ভিত্তিক করার জন্য সভা সমাবেশ জোরদার করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন সিলেট জেলা মহিলা মুসলিম লীগের সভানেত্রী জোবেদা খানম। এ স্মারকলিপিতে মুসলিম লীগের মহিলা নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার আহবান জানান। এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান গণপরিষদের ভাষা হিসেবে বাংলাকে বাদ দেয়ার প্রতিবাদে তমদ্দুন মজলিশ সমাবেশ করে। গণপরিষদে বাংলাভাষাকে অন্তর্ভূক্তির দাবী জোরালোভাবে জানানো হয়। যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিশ ১১ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফলে ১৯৪৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকে।