কৃষি পণ্যে বিধিমালা প্রণয়ন করুন

4

কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যে ন্যায্য দাম পান না। ভোক্তা পর্যায়ে উৎপাদন মূল্যের চেয়ে পণ্যমূল্য অনেক বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে মুনাফার অধিকাংশ অর্থ চলে যাওয়া ইত্যাদি অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনাও লেখালেখি হয়েছে। কেউ যাতে ক্ষতির মুখোমুখি না হয়, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকেও নানাভাবে চেষ্টা হয়েছে। বিপণন অধিদফতর কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন মুনাফার হার ধরে কৃষিপণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে আসছিল। কোন কিছুতেই খুব একাটা ফল হয়নি। এবার মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেয়া হলো। বিভিন্ন স্তরে কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ মুনাফার হার বেঁধে দিয়ে কৃষি বিপণন বিধিমালা জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষক, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের সর্বোচ্চ স্বার্থরক্ষা এবং মধ্যস্বত্বভোাগীদের অনৈতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণই সরকারের এই উদ্যোগ। একই সঙ্গে কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের রফতানিকারক, আমদানিকারক, ডিলার, মিলার, সরবরাহকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী এবং চুক্তিবদ্ধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্সের ফিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবসার কোন স্তরেই নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা নেয়া যাবে না। যেমনÑ ধান, চাল, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ যৌক্তিক মুনাফার হার হবে ৩০ শতাংশ। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশের বেশি মুনাফা করতে পারবে না। খুচরা পর্যায়ে মুনাফার হার হবে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। একই হার প্রযোজ্য হবে উৎপাদিত সব ধরনের মাছ, ডিম, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, সুপারি, পান, সব রকম ভুসি, ডাব, নারিকেল, পাট, চা, তুলা, তামাক ও অন্যান্য অর্থকরী ফসল এবং সব ধরনের ডালের ক্ষেত্রে। তেলবীজÑ রাই, সরিষা, তিল, তিসি, বাদাম, নারিকেল, সূর্যমুখী, সয়াবিন ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও মুনাফার সর্বোচ্চ হার হবে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।
এবার নীতিমালায় মুনাফার হার নির্ধারণ করে দেয়ায় এটি আর পরিবর্তন করতে হবে না। কোন পর্যায়ে নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা নিলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। কৃষি বিপণন আইনে বলা হয়েছে, কৃষি উপকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলে বা সরকারের নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা গ্রহণ করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে শাস্তি হবে দ্বিগুণ। আইন অনুযায়ী বিধিমালায় জাতীয় কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটি, জেলা কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটি, উপজেলা কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটি এবং বাজারভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং কার্যাবলি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এই বিধিমালা যথাযথ কার্যকর হলে প্রতিটি পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে খুচরা বিপণন পর্যন্ত মনিটরিং কার্যক্রমের আওতায় আসতে পারে।