কৃষির উন্নয়নে পদক্ষেপ নিন

17

দেশে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত শিল্পায়ন সাধিত হলেও মূলত কৃষিই যে বাংলাদেশের আয়-উন্নতির প্রাণভোমরা, একথা অস্বীকার করা যাবে না কিছুতেই। মনে রাখতে হবে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখনও গ্রামে বসবাস করে এবং তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশায় জড়িত। করোনা মহামারীজনিত একটানা দীর্ঘ ৬৬ দিন লকডাউনে দেশের শিল্প-কারখানাসহ প্রায় সব কিছুর কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিত থাকলেও কৃষিকাজ থেমে থাকেনি একদিনের জন্যও। যে কারণে বোরো-আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক ধান-চালের আশানুরূপ দাম পেয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কেউ না খেয়ে থাকেনি। মারা যায়নি অনাহারে। মোটকথা, কৃষিই মূলত বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। সরকারও বিষয়টি সম্যক অনুধাবন করে চলতি বোরো মৌসুমে বিশেষ করে সেচকাজে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সর্বক্ষণ সচল রাখার জন্য ফেব্রুয়ারি-মে মাস পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দিতে বলেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।
বর্তমান সরকার জনবান্ধবের পাশাপাশি কৃষকবান্ধবও বটে। এতে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। এরই একটি অংশ হিসেবে সরকার গত বছর ডাই এ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সারের দাম প্রতি কেজিতে কমিয়েছে ৯ টাকা। আগে প্রতি কেজি ডিএপি সারের দাম ছিল ২৫ টাকা। এখন কৃষক তা পাচ্ছেন মাত্র ১৬ টাকায়। এর ফলে ডিএপি সারে সরকারের প্রতিবছর প্রণোদনা বাবদ ব্যয় হবে ৮০০ কোটি টাকা, যা মেটানো হবে কষি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ৯ হাজার কোটি টাকা থেকে। সরকার এ নিয়ে অন্তত পাঁচ দফায় সারের দাম কমিয়েছে। উল্লেখ্য, সরকার অন্যান্য সারেও প্রতি বছর ভর্তুকি দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, ডিএপি ইত্যাদি। দেশে কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সার ব্যবহারের প্রবণতা বেশি, যা কিছুটা ব্যয়বহুল। এর পরিবর্তে ডিএপি সার ব্যবহার করা হলে জমিতে একই সঙ্গে ইউরিয়া ও ফসফেটের জোগান দেয়া সম্ভব হয়। সারের বাইরেও সরকার অন্যান্যভাবেও প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষককে। ইতোপূর্বে কৃষিমন্ত্রী ঘোষিত প্রান্তিক ৭ লাখ কৃষকের জন্য প্রায় ৮১ কোটি টাকা মূল্যের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক। দেশের মানুষের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শস্য বহুমুখীকরণসহ উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রকৌশল অবলম্বন, উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাত প্রতিস্থাপন, সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনও জরুরী।