কাজিরবাজার ডেস্ক :
হাইকোর্টের নির্দেশে করোনাসহ অতি প্রয়োজনীয় দশটি মেডিকেল পরীক্ষায় মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে এই দশটি পরীক্ষার নির্ধারিত মূল্য তালিকা দৃশ্যমান উন্মুক্ত স্থানে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর এই তালিকা দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনতিবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যে দশটি পরীক্ষায় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো: সিবিসি, সিআরপি, এলএফপি, এস.ক্রিয়েটিনিন, এস. ইলেকট্রোলাইট, ডি.ডিমার, এস.ফেরেটিন, এস প্রোকালসিটোনিন, সিটি স্ক্যান, চেস্ট এক্সরে (ডিজিটাল এনালগ) ও অক্সিজেন।
সিবিসি পরীক্ষার সর্বনিম্ন মূল্য ৪০০ ও সর্বোচ্চ মূল্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এই পরীক্ষাটির স্থির মূল্য ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা। সিআরপি পরীক্ষার নিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা। এলএফটি পরীক্ষার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ৯৫০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা এবং স্থির মূল্য এক হাজার টাকা।
একইভাবে এস.ক্রিয়েটিনিন সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেয়া হয়েছে ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকা, আর পরীক্ষার স্থিরমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। এস ইলেক্ট্রোলাইট পরীক্ষার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫০ থেকে ১৪৫০ টাকা আর স্থিরমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার টাকা। ডি. ডিমার পরীক্ষার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা আর স্থিরমূল্য এক হাজার ৫০০ টাকা।
এস. ফেরিটিন পরীক্ষার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা, আর স্থিরমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা। এস. প্রোকালসিটোনিন সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা, আর এই পরীক্ষার স্থিরমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার টাকা।
সিটি স্ক্যানের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য পাঁচ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা, আর সিটি স্ক্যানের স্থির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। অ্যানালগ চেস্ট এক্স-রের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৩০০ থেকে ৫০০, ডিজিটাল পদ্ধতির মূল্য নির্ধারণ করা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর এই দুটি পরীক্ষার স্থির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ ও ৬০০ টাকা।
এর মধ্যে অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ ও কোভিড-১৯ সম্পর্কিত কিছু পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে সরকার। পরে মূল্য নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
অক্সিজেনের নির্ধারিত মূল্য একক ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার সিস্টেমে ঘণ্টায় দুই থেকে পাঁচ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য ১০০ টাকা, ছয় থেকে নয় লিটারের জন্য ১২৫ টাকা এবং ১০ থেকে ১৫ লিটারের জন্য ১৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে (জেনারেটর বেইজড) ঘণ্টায় দুই থেকে পাঁচ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য ১২০ টাকা, ছয় থেকে নয় লিটারের জন্য ৩০০ টাকা এবং ১০ থেকে ১৫ লিটারের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫০ টাকা।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে (লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক বেইজড) ঘণ্টায় দুই থেকে পাঁচ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য ১২০ টাকা, ছয় থেকে নয় লিটারের জন্য ২৫০ টাকা এবং ১০ থেকে ১৫ লিটার ব্যবহারের জন্য ৩০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে (হাইফ্লোনজেল ক্যানোলা) ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ লিটার অক্সিজেন ব্যবহারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এর আগে, জুলাই ২০১৮ সালে এ বিষয়ে একটি রিট আবেদন করেন আইনজীবীদের সংগঠন হিউম্যান রাইটস ল’ইয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিং এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের নামে আইনজীবীদের পক্ষে সংগঠনের পক্ষে মো. শাহ আলম এই রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে ২৪ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
এর ধারাবাহিকতায় গত বছর বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি নির্ধারণের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট বিভাগ।
আর এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ডিসেম্বরে হাইকোর্টে দাখিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আদেশ পাওয়ার পর এ মূল্য তালিকা কোভিড হাসপাতালের উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শনের জন্য সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।