শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
ওসমানীনগর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সংযোগ রক্ষাকারী গোয়ালাবাজার- খাদিমপুর সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় যাত্রী সাধারণ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীর অফিসের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়সারা মনোভাবের কারণে মন্থর গতিতে সংস্কার কাজ করায় জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সড়কের উপরে একাধিক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে করা হচ্ছে সংস্কার কাজ। ফলে বিপদজনক এই বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোর কারণে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। এক কিলোমিটারের ভিতরে রয়েছে ৫টি ঝুঁকিপূর্ন বৈদ্যুতিক খুঁটি। এছাড়া, ধীরগতিতে সংস্কার কাজ করায় এবং দেড় বছর থেকে সড়ক খুঁড়ে রাখায় বিভিন্ন স্থানে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ ও পাশ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা ধুলার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। সড়কের একাধিক স্থানে পুরনো পিচ না তুলে সেই পিচের উপরে নতুন করে বিটুমিনের প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। সংস্কার কাজে এমনি নানা অনিয়ম হচ্ছে বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজের টেন্ডার পায় রাশেদুজ্জামন কন্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আরটিআই প্রজেক্টের আওতায় এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ওই বছর অক্টোবর মাসে শনিরবাজার থেকে গোয়ালাবাজার সড়কে সংস্কার কার শুরু হয়। কাজ শুরুর পর ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হলে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়। এরপর খুঁড়ে রাখা এই সড়কে যাত্রীরা বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকার হন। করোনাকালীন সময়ে সংস্কার কাজ বন্ধ থাকাবস্থায় উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ব্যক্তি উদ্যোগে এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে ইট-বালু দিয়ে সড়কের ছোট-বড় গর্তগুলো ভরাট করে দিয়ে জনসাধারণের সাময়ীক চলাচলের সুযোগ করে দেন।
এদিকে, দীর্ঘ ৬ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোব্দ হলে উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় ২০২০ সালের ২৬ আগষ্ট পুনরায় সংস্কার কাজ শুরু হয়। কাজে নানা অনিয়মের পাশাপাশি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সড়ক খুঁড়ে তোলা ইট-পাথর বিক্রিরও অভিযোগ ওঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, এই সড়ক দিয়ে উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ চলাচল। দীর্ঘ একযুগ ধরে এই সড়কটি খানাখন্দে পরিণত হওয়ায় মারত্মক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সংস্কার কাজ শুরুর দেড় বছর হয়ে গেলেও কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। সম্প্রতি এই রাস্তায় আবারো বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু সংস্কার কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় রোগী ও যাত্রী সাধারণ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাশেদুজ্জামন কন্ট্রাকশনের প্রকল্প ম্যানেজার মাকসুমুল হায়দার বলেন, সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। সড়কের ৭৫ ভাগ কাজ হয়েছে, পরবর্তী এক মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে। গাড়ি দিয়ে কংক্রিট এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে সড়কের নিচু অংশ ভরাট করে দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন সড়কের কিছু কংক্রিট নিয়ে যায়, আমরা কংক্রিট বিক্রি করি না।
এবিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী এসএমআল মামুন বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী সম্পূর্ণ সড়ক খুঁড়ে সংস্কার করার কথা রয়েছে। পুরাতন পিচ না তুলে সংস্কার করার কথা নয়। কিছুক্ষণ পর কল দিয়ে তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন- প্রায় এক কিলোমিটারে আরসিসি থাকায় আরসিসির উপরে বিটুমিনের প্রলেপ দিয়ে পিচ করা হয়েছে।