খ্রিস্টীয় নতুন বছরের প্রারম্ভে সমগ্র দেশ ও জাতি যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনরত, তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আরও একটি অভূতপূর্ব স্বীকৃতি এলো বাংলাদেশের জন্য। আর সেটি হলো স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান। আগামী ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় গ্র্যাজুয়েশনের সমস্ত মানদ- পূরণ ও উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তবে তা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে। প্রধানত করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভাল করা সত্ত্বেও পিছিয়ে যেতে হলো দুই বছর। কারণ বাংলাদেশ প্রধানত যাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে, করোনা মহামারীরতে সেসব দেশ প্রায় নাজেহাল এবং অর্থনৈতিক অবস্থাও নাজুক। ফলে ঝুঁকি বিবেচনায় দুই বছর সময় চাওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ২০২৬ সালের পরবর্তী তিন বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে, যা পূরণ হবে বলেই প্রত্যাশা।
জাতিসংঘ বিশ্বের দেশগুলোকে মোটা দাগে তিনটি ভাগে ভাগ করে থাকে। এগুলো হচ্ছে- উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত বা এলডিসি। প্রধানত মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এই তিন সূচক দিয়ে কোন দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কিনা, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করে থাকে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগে ছয় বছর। এক্ষেত্রে অবশ্য বিশ্বব্যাংকের সূচক নির্ধারণে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। সিডিপির আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা আগামী বছরের ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি। সেই বৈঠকে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত মনোনয়নের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বে ৪৭টি দেশ এলডিসির তালিকাভুক্ত। করোনাকালীন মহামারীতে উন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি এলডিসি ভুক্ত দেশগুলোও স্বভাবতই নিজেদের অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিয়ে হিমশিম খেয়েছে। যার রেশ শেষ হয়নি এখনও। এমন এক প্রেক্ষাপটে এলডিসিভুক্ত দেশ চাদ একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব রেখেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে (ডব্লিউটিও)। এতে বলা হয়েছে, এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী ১২ বছর যেন একই রকম বাণিজ্য সুবিধা পেতে পারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো, তা বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ অন্তত ছয় বছরের জন্য এই সুবিধা পেতে আগ্রহী। এর আওতায় রয়েছে বিশ্ববাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা, ওষুধ শিল্প খাতে রেয়াতি সুবিধা, সরবরাহ সক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তাসহ অন্যান্য সুবিধা। চাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই সুবিধা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। সিডিপি এবার আরও একটি সুখবর দিয়েছে। তিনটি নির্ণায়ক সূচকের মান থাকবে ২০১৮ সালের মতোই, প্রধানত করোনার কারণে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে তিনটি সূচকের সব কটিতেই মান অর্জন করে প্রাথমিক মনোনয়ন পেতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা বহমান তাতে এই অর্জন খুবই সম্ভব বলে প্রতীয়মান হয়।