বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
টাঙ্গুয়ার হাওরে আসছে না অতিথি পাখি। গত তিন চার বছর ধরে হঠাৎ করেই অতিথি পাখি আসা অনেকটা কমে গেছে। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাখি দেখার জন্য পর্যটকরা বিগত বছরগুলোয় টাঙ্গুয়া হাওর আসলেও পাখি দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন । দু’মাস হলো শীত পড়েছে কিন্তু উল্লেখযোগ্য হারে পর্যটক আসছেন না হাওরে। এক সময় শীতকালে প্রচুর পাখি প্রেমি টাঙ্গুয়া হাওরে আসতেন । হাওরে পাখি না আসার কারনে এখন আর শীতকালে টাঙ্গুয়া হাওর ঘুরতে লোকজন আসছেন না। শুধু টাঙ্গুয়া হাওর নয় কোন হাওরের অতিথি পাখি তেমন একটা চোখে পড়ছে না। হাওর-বিল জলাশয় ও আশপাশের এলাকাগুলোতে পাখি শিকারিদের বিষটোপ, জাল ও বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে পাখি নিধনের মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় অতিথি পাখি আসা একবারেই কমে যাওয়ায় মুল কারণ মনে করেন স্থানীয় লোকজন ও পাখি প্রেমিরা।
জীব বৈচিত্র্য ভরপুর টাঙ্গুয়া হাওরে মাছ, পাখি ও অন্যান্য জলজ প্রাণির এক বিশাল অভয়াশ্রম ছিলো এক দশক পূর্বেও। বর্তমানে কোনটিই আর আগের মত নেই হাওরে। দিনে দিনে বিপন্ন হচ্ছে টাঙ্গুয়া হাওর।
১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালে এই হাওরকে ঘোষণা করা হয় রামসার স্থান হিসেবে। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে ও হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে বিভিন্ন সংস্থা। বর্তমানে হাওরটি দেখ ভাল করছে জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জ।
স্থানীয় লোকজনের মতে হাওর কে সংকটাপন্ন এলাকা বা রামসার সাইট ঘোষণার আগে সব কিছু ছিল হাওরে। এখন কোন কিছুই নাই সে অর্থে। হাওরে যেমন মাছ ছিল তেমনি পাখিও ছিলো সারা বছর দেশী বিদেশী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ছিলো টাঙ্গুয়া হাওর। দেখা যেতো প্যালাসেস কুড়া ঈগল, কিংস্টর্ক, শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খচিল, মরচেরং ভুতিহাঁস, পিয়ংহাস, ভুতিহাঁস, শোভেলার, লালচে মাথা ভুতিহাঁস, লালশির, নীলশির, পাতিহাঁস, লেনজা, ডুবুরি, পানকৌড়ি সহ নানা প্রজাতির দেশী বিদেশী পাখি।
বর্তমানে কোন একটি প্রজাতিও আগের মত চোখে পরে না। পাখি না আসার কারণ পাখির বিচরণ স্থল নষ্ট হয়ে যাওয়া, রাতের আঁধারে হ্যাজেক লাইট জ¦ালিয়ে মাছ শিকার, হাওরের বন কেটে নিয়ে যাওয়া, ফাঁদ পেতে পাখি শিকার, বিষটোপ প্রয়োগসেই সাথে জমিতে আগাছা পরিষ্কারের জন্য রফিট ব্যবহার পাখি না আসার উল্লেখযোগ্য কারণ।
টাঙ্গুয়ার হাওর পার মন্দিয়াতা গ্রামের শিক্ষক সানজু মিয়া বলেন, হাওরর বিভিন্ন বিলের জলাবন কেটে নিয়ে যাওযায় পাখির বিচরণ স্থল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া চোরা শিকারীতো আছেই। সব মিলিয়ে এখন আর হাওরে পাখি নেই। যথ সামন্য পাখি দু চারদিন থাকে আবার চলে যায়।
ট্রাভেলার পয়েল আহমেদ (সিলেট) তিনি বলেন, পাখির ছবি তোলার জন্য টাঙ্গুয়া হাওর আসতে চেয়েছি। বিভিন্ন লোকজনের কাছে শুনলাম হাওরে না কি এখনো পাখি আসে নি।
পাখি গবেষক ফটোগ্রাফার নাজিম উদ্দিন খান প্রিন্স (ঢাকা) জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখির খোঁজে তিনি অনেকবার এসেছেন। হাওরে পাখি না আসায় গত দু তিন বছর ধরে তিনি আর টাঙ্গুয়া হাওরে আসেন না।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, টাঙ্গুয়া হাওরে অতিথি পাখি আসা কমে গেছে এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক ব্যাপার। অতিথি পাখি ও বন্যপ্রাণী শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাতের আঁধারে বিশাল হাওরে চোরা শিকারীদের ঠেকানো প্রশাসনের পক্ষে কিছুটা কঠিন হয়ে পরে। চোরা শিকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পাখি শিকার রোধে স্থানীয়দের এগিয়ে আসেত হবে।