স্পোর্টস ডেস্ক :
করোনার কালো থাবায় স্তব্ধ পুরো পৃথিবী। গোটা পৃথিবী যেখানে থমকে গিয়েছে, সেখানে ক্রিকেটের সাময়কি বন্ধ থাকার ব্যাপারটা নগণ্য। করোনার প্রকোপ এখনো কমেনি। কিন্তু দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকার প্রায় প্রতিটি দেশেই শুরু হয়েছে ক্রিকেট। মাঠে নামছেন ‘জেন্টলম্যানরা’। বাংলাদেশের ক্রিকেটও এর বাইরে নয়।
চলতি বছরে তিন ফরম্যাটে মাত্র ৯টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলছেন রাসেল ডোমিঙ্গোর শিষ্যরা। এর মধ্যে রয়েছে ৩টি ওয়ানডে, ২টি টেস্ট এবং ৪টি টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডেতে শতভাগ জয় থাকলেও টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে জয়ের হারটা ঠিক পঞ্চাশ শতাংশ।
খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে না পারলেও এ বছরটা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ডানহাতি ওপেনার লিটন কুমার দাসের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা ২০২০ সালে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের মালিক হয়েছেন এই ড্যাশিং ওপেনার।
লিটন দাস এক ইনিংসে করেছেন ১৭৬ রান। পুরো বিশ্বে এই বছর ওয়ানডেতে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি কেউ। দ্বিতীয় অবস্থানে আরেক বাংলাদেশি ওপেনার তামিম ইকবাল। এক ইনিংসে তার সংগ্রহ ১৫৮ রান। ২০২০ সালে ওয়ানডে ম্যাচে লিটন-তামিম ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান ১৫০ রানও করতে পারেনি।
লিটন-তামিম জুটি আরেকটি রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে ২৯২ রান তুলেন তারা। আর তাতেই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপে নিজেদের নাম লেখান। তাই ২০১৭ সালে কার্ডিফে গড়া সাকিব-মাহমুদউল্লাহ ২২৪ রানের জুটি এখন দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। রানের দিক থেকে হিসাব করলে ২০২০ সালে ওয়ানডেতে তামিম-লিটনের জুটিই বিশ্বসেরা।
এ বছর ওয়ানডেতে তিনটি ম্যাচের সবকটিই জয় পেয়েছে টাইগাররা। ৩-০ তে সিরিজ জিতে সফররত জিম্বাবুয়েকে করে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ১৬৯ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ম্যাচ জিতে যথাক্রমে ৪ এবং ১২৩ রানে।
এ বছর বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন লিটন দাস। ১৫৫.৫০ গড়ে তিন ম্যাচে সংগ্রহ করেছেন ৩১১ রান। তার চেয়ে ১ রান কমে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তামিম ইকবাল। বল হাতে মাত্র দুই ম্যাচে ৭টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এদিকে তিনটি করে ম্যাচ খেলে যথাক্রমে ৬টি এবং ৪টি উইকেট নিয়ে যথাক্রমে তালিকার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন তাইজুল ইসলাম ও মাশরাফি বিন মুর্তজা।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে মুমিনুল হকের দল। একটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস এবং ৪৪ রানে হারে টাইগাররা। অন্যটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস এবং ১০৬ জয় পায় বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় প্রথম স্থানে যথাক্রমে রয়েছেন মুশফিকুর রহিম এবং মুমিনুল হক। দুজনই ২০৩ রান করেছেন। টেস্ট অধিনায়ক দুটি ম্যাচ খেললেও টাইগার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। ১৫৩ রান করে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন নাজমুল হাসান শান্ত।
২০২০ সালে পাকিস্তান এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুইটি করে মোট চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। গাদ্দিফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই পরাজিত পরাস্থ হয় বাংলাদেশ। অন্য দুই ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে যথাক্রমে ৪৮ রান এবং ৯ উইকেটে হারায় রাসেল ডোমিঙ্গোর শিষ্যরা।
মার্চ মাসের পর দীর্ঘদিন অলস সময় কাটায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাই ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরাতে প্রেসিডেন্টস কাপের আয়োজন করে বিসিবি। এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বাধনী মাহমুদউল্লাহ একাদশ।
এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেন টুর্নামেন্টের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল একাদশের মুশফিক। ৫ ম্যাচে প্রায় ৪৪ গড়ে তার সংগ্রহ ২১৯ রান। এদিকে ২১৪ রান করে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করেন একই দলের ইরফান শুক্কুর। ১২টি করে উইকেট নেন যথাক্রমে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও রুবেল হোসেন। সুমন খান পেয়েছেন ৯টি উইকেট। এদিকে নিজের ঝুলিতে ৮টি উইকেট নিশ্চিত করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
চলতি বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে জমজমাট আসরটি হলো বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। নভেম্বরের ২৪ তারিখে মিনিস্টার রাজশাহী-বেক্সিকো ঢাকার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে ৫টি দলের এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ঘটে। ১৮ ডিসেম্বরে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল ম্যাচে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে জেমকন খুলনা।
৩৯৩ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় শীর্ষে চট্টগ্রামের ওপেনার লিটন কুমার দাস। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২৪ রান। এদিকে ৩০১ রান করে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন রাজশাহীর দলপতি নাজমুল হাসান শান্ত।
১০ ম্যাচে ২২টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের ‘কাটার মাস্টার’ মোস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭টি উইকেট পেয়েছেন বেক্সিমকো ঢাকার মুক্তার আলী। তৃতীয় স্থানে থাকা ফরচুন বরিশালের পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বী নেন ১৬টি উইকেট।