সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ জাহিরভাঙ্গা-বসন্তপুর বেড়িবাঁধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ১৬ গ্রামবাসী, নতুন নকশা প্রণয়নের দাবী

23
সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের যুগলনগর গ্রামের বাসিন্দা মো: আজমান আলী।

স্টাফ রিপোর্টার :
অপরিকল্পিত প্রণয়ন করা নকশায় ‘জাহিরভাঙ্গা-বসন্তপুর বেড়িবাঁধ উপ-প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হলে হাওরে চিরস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রকল্পের পাশে থাকা বেশ কয়েকটি গ্রামের ছোট খাল-বিল এবং কৃষি জমি। পাশাপাশি মৎস আহরণ করে জীবিকা নির্বাহকারীরা পথে বসবে।
এছাড়া প্রকল্পের প্রথম নকশায় তালুপাঠ, নরসিংহপুর, যোগলনগর, কচুরকান্দি গ্রামসমূহ আওতাধীন থাকলেও পরবর্তীতে এসব গ্রামকে বাদ দিয়ে নকশা প্রণয়ন করা হয়। যা এই গ্রাম সমূহের জন্য বিরাট ক্ষতি ডেকে আনবে। এসব কারণে এ উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে নতুন নকশা তৈরির মাধ্যমে প্রকল্প শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের আহবান জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের ‘জাহিরভাঙ্গা-বসন্তপুর বেড়িবাঁধ উপপ্রকল্প’র অন্তর্ভুক্ত ও আশপাশের ১৬টি গ্রামের বাসিন্দারা। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন তারা। এ সময় তারা এ উপপ্রকল্পের কার্যকরী কমিটি, উপ-কমিটি ও সদস্য নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি এবং অনিয়মের কারণে উপকারভোগী প্রকৃত কৃষক ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজের কথাও তুলে ধরেন। তারা এসব কমিটি বাতিলেরও দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জাইকার অর্থায়নে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়ে) এসএসডব্লিউআরডিপি-২ এর ‘জাহিরভাঙ্গা-বসন্তপুর বেড়িবাঁধ উপপ্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। এই প্রকল্পের আওতায় ৮টি গ্রামের ২৪৫০টি পরিবারের প্রতিনিধিত্ব উপেক্ষা করে ও আশপাশের আরও ৮টি গ্রামের কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ করে গত ২২ নভেম্বর ‘জাহিরভাঙ্গা-বসন্তপুর বেড়িবাঁধ উপপ্রকল্প’র বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরও হয়েছে। বর্তমান নকশায় ও একই পরিবারের সদস্যদ্বারা গঠিত কমিটির মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এলাকার মানুষের উপকারের চেয়ে গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এ উপপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়। কিন্তু এলাকার কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ মহল এ কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পুরো প্রকল্প প্রক্রিয়া স্থানীয়দের অগোচরেই সম্পাদনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী ও উপকারভোগীরা চলতি বছরের অক্টোবর মাসে এ প্রকল্পের কথা জানতে পারেন। এরই মাঝে নিয়ম বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় নির্বাচন ছাড়া উপজেলা সমবায় কর্মকতার মাধ্যমে গত ১৭ আগষ্ট জাহিরভাঙ্গা বসন্তপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। জনসাধারণের মত উপেক্ষা করে ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহিদপুর গ্রামের আবুল খয়ের, একই গ্রামের রফিক উদ্দিন ও ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য ছালিক মিয়া চৌধুরী নিজেদের স্বজনদের দিয়ে এ কমিটি গঠন করেছেন। এরপর উপকারভোগী এলাকাবাসী ওই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে মতবিনিময় সভার আহবান করেছিলেন। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে স্থানীয় নতুন বাজারে তারা সভা করতে পারেননি। পরে স্থানীয় বন্তপুর গ্রামে এ বিষয়ে তারা দুটি সভা করেছেন। এসব সভায় প্রকল্প কমিটি সংশ্লিষ্ট আবুল খয়ের ও ছালিক মিয়া চৌধুরী গংদের উপস্থিত হওয়ার আহবান করা হলে তারা উপস্থিত হননি; উল্টো এলাকাবাসীর মতামত উপেক্ষা করেই প্রকল্পকাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
উপপ্রকল্পের কার্যকরী কমিটি, উপ-কমিটি ও সদস্য নির্বাচন নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ওই দুই ইউপি সদস্য নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য নিজেদের পরিবারের লোকজন এবং স্বজনদের দিয়ে এসব কমিটি গঠন করেছেন। প্রকৃত জমির মালিক কৃষক, মৎস্যজীবী কাওকেই কমিটিতে স্থান দেয়া হয়নি। পাশাপাশি প্রকৃত উপকারভোগীরা সদস্য হতে চাইলে তাদের কাছে বিরাট অংকের টাকাও চাওয়া হয়েছে। অথচ প্রকৃত কৃষক নয়; এমন অনেক ব্যক্তিকেই এ প্রকল্পের সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া পানি সম্পদ প্রতিবেদন, কৃষি প্রতিবেদন, সামাজিক পরিবেশ ও মৎস্য সম্পদ প্রতিবেদন মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তৈরি তারা প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করিয়েছেন, এ কারণে প্রকল্প এলাকা ও আশপাশের কৃষি ও মৎস্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হবেন।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘উপপ্রকল্পের এসব কমিটি ও প্রকল্প এলাকার আনুসাঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত এবং সীমানা নিয়ে মিথ্যাচার ও অনিয়মের বিষয় এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আকারে অভিযোগ করে অবহিত করেছেন। তবুও তারা এর কোন প্রতিকার পাননি। উল্টো প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ৮ গ্রাম ও আশপাশের আরও ৮ গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গত ২২ নভেম্বর প্রকল্প বাস্তবায়নে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তির কারণে প্রকল্প এলাকার হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির শঙ্কাও রয়েছে।
বর্তমান প্রকল্পের নকশা বাতিল করে প্রকল্পের পশ্চিমে আনুজানি, বরাটুকা, দক্ষিণ বরাটুকা, রোকনতাজ, মেওয়াতৈল গ্রামসমূহকে প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানান ১৬ গ্রামের বাসিন্দারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মো. আজমান আলী, মো. ধন মিয়া মহালদার, মো. ইন্তাজ আলী, মো. আব্দুর রহমান, মো. নুর বক্স, লুৎফুর রহমান, মাহবুবুল আলম মুহিত, সুলতান খান, নুরুল ইসলাম পাখী, জামাল উদ্দিন, শাহ ওলিউর রহমান, মাসুদ আহমদ ফারুক, খলিল আহমদ, আবুল কালাম, আব্দুর রউফ, হাজী সুন্দর আলীসহ ১৬টি গ্রামের অধর্শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।