কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সারাদেশে যোগাযোগের একটা ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। এর ফলে আজকে আামাদের অর্থনীতির চাকা অনেক সচল এবং এই করোনাকালেও অর্থনীতি অটুট আছে। তিনি বলেন, ‘সরকার আরও অনেক কাজ শুরু করেছে, যেগুলো অবশ্যই সম্পন্ন করা হবে।’
রবিবার (২২ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ‘বীর প্রতীক গাজী সেতু’সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ফেরিঘাট রাস্তায় শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ১০ হাজার মিটার চেইনেজে ৫৭৬.২১৪ মিটার দীর্ঘ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) সেতুটির কারণে বদলে যাচ্ছে পুরো রূপগঞ্জের চিত্র।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার মধুমতি নদীর ওপরে এলাংখালী ঘাটে ৬০০.৭০ মিটার দীর্ঘ ‘শেখ হাসিনা সেতু’, যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় সড়ক ও জনপথের যশোর-খুলনা সড়কের ভাঙ্গাগেট (বাদামতলা) হতে আমতলা জিসি ভায়া মরিচা, নাউলী বাজার সড়কে ভৈরব নদীর ওপরে ৭০২.৫৫ মিটার দীর্ঘ সেতু এবং পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ উদ্বোধন করেন।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন শেষে সচিবালয় প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি গণভবন প্রান্ত ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ, যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। এর মধ্যে পাবনার ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’-এ যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা। রূপগঞ্জ প্রান্তে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ অন্যরা যুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মা ভাই সব হারিয়ে রিক্ত নিঃস্ব হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই আকাঙ্ক্ষাটা পূরণ করবো, সেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে। যা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত জীবন দেবেন, তার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।’
বারবার সরকার গঠনের সুযোগ দিতে দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমাদেরকে বারবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার সুযোগ দিয়েছে। সে কারণেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ যে অন্ধকার যুগে ছিল, একটু আলোর ঝলকানি পেয়েছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে। বাংলাদেশের জন্য একটা স্বর্ণযুগ ছিল। কিন্তু আবারও ২০০১ সালের পর যে অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হলো, বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারলো না, একটা চক্রান্তের ফলে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে আবারও প্রায় ৮টা বছর পিছিয়ে গেলো। ২০০৯ সালে যখন ফের আমরা সরকার গঠন করি, তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছি বলেই আজকে দেশের মানুষের উন্নতিটা করতে পারছি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের যে জীবনমান উন্নত করা যায়, সেটাও আমরা প্রমাণ করেছি।’ সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎসহ অর্থনীতির চাকাটা সবসময় যেন সচল থাকে, সবদিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েই কাজ করার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা সংগঠন। আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই কোনোকিছু করেনি। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখন থেকেই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা ছিল। জাতির পিতা কিন্তু এসব পরিকল্পনা বহু আগেই করে গেছেন। তিনি আমাদের যে সংবিধান দিয়ে দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানেই কিন্তু এদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের কথা, মৌলিক চাহিদা পূরণের কথা, স্পষ্ট উল্লেখ করে গেছেন। সেই দিকেই অনুসরণ করেই আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনাটা নেই। ফলে অন্য কিছু করবার প্রয়োজন হয়নি এবং তার বক্তৃতাগুলো যদি শুনি, সেখানেই কিন্তু স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে কীভাবে এদেশের উন্নতি হতে পারে। আমরা সেটাই অনুসরণ করে সব সময় প্রস্তুতি নিয়েছি, পরিকল্পনা নিয়েছি এবং যখনি সরকারে এসেছি, তা বাস্তবায়ন করেছি।’ যার শুভ ফলটা দেশের মানুষ পাচ্ছে বলে দাবি করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুজিববর্ষের কর্মসূচি জাঁকজমকভাবে পালন করতে না পারার আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাপক আয়োজন ছিল। কিন্তু যেভাবে আমরা করতে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবে করতে পারিনি। করোনাভাইরাস নামে এমন একটা ভাইরাস সারাবিশ্বকে অচল করে দিলো। শুধু বাংলাদেশ বলে না, সমগ্র বিশ্বের মানুষই কিন্তু এর জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’
করোনার ভ্যাকসিন বুক করে রেখেছি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা আসছে বিশ্বব্যাপী। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি মানুষ যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং অপরকে সুরক্ষিত করা এই দায়িত্বটা সবাইকে পালন করতে হবে এবং আমরা এটা করতে পারবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তাছাড়া যে ভ্যাকসিনটা আবিষ্কার হচ্ছে, সেটা ইতোমধ্যে ক্রয় করার জন্য আমরা আগাম টাকা-পয়সা দিয়ে বুক করে রেখে দিয়েছি। কাজেই সেইদিক দিয়ে দেশবাসীর চিন্তার কিছু নেই।’ আমরা অন্যান্য সবকিছু বাদ দিয়ে আগে মানুষকে কীভাবে সুরক্ষিত করবো, সেগুলো আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধন করা তিনটা সেতু কিন্তু এই সব অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে বিশেষ অবদান রাখবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।