নারীর প্রতি সহিংসতা সমাজের একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। যাকে কঠোর আইন কিংবা বিধিবদ্ধ বিচার দ্বারা কতখানি নির্মূল করা সম্ভব তাও সবসময় বিবেচনাধীন থেকেছে। প্রচলিত অপসংস্কৃতি, হত্যা, নির্যাতন সব মিলিয়ে মারাত্মক অপরাধ সমূহের আইনী ব্যবস্থা থাকলেও সময়ের আবেদনে আর অন্যায়ের মাত্রাকে নতুনভাবে বিচার বিশ্লেষণের প্রয়োজন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণেই পুরনো আইনকে নতুন মাত্রা দিতে হয়। আমাদের দেশে নারীর প্রতি নির্যাতন আর নিপীড়ন অলিখিত এক সামাজিক অব্যবস্থাপনা। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে অর্থ, বিত্ত আর মর্যাদার ফারাক যেমন দৃষ্টিকটুভাবে বিদ্যমান, তেমনি লিঙ্গবৈষম্যও সংশ্লিষ্টদের মারাত্মকভাবে হতচকিত আর দিশাহারা করে দেয়। অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া অর্ধাংশ নারী সমাজ সবসময় মানবিক মূল্যবোধের চরম অবমাননার শিকার হয়। কন্যাশিশু থেকে আরম্ভ করে যে কোন বয়সের নারী পাশবিকতার চরম নিষ্পেশনে তাদের মূল্যবান সম্ভ্রমটুকু হারিয়ে বসে। নারীর ওপর বর্বর হামলার নিরিখে প্রচলিত আইনকে আরও কঠোরতম পর্যায়ে নিয়ে পুরনো বিধিকে সংস্কারের গুরুত্ব বেড়ে যায়। গত ১৩ অক্টোবরে সংশোধিত আইনে ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয় ‘শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইনে।’ ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে এই নতুন আইনের বিল সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়। শুধু তাই নয়, একটি আপত্তিকর শব্দ নিয়েও সংসদ নতুন বিধি জারি করে। ‘ধর্ষিতার’ জায়গায় এখন থেকে লিখতে ও বলতে হবে ‘ধর্ষণের শিকার’। ধর্ষণের শিকার নারীরা যাতে অল্প কার্যদিবসে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ন্যায় বিচার পায় তেমন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী।
জনবসতি ঘন বস্তি এলাকায় ধর্ষণের শিকার হওয়ার চিত্র উঠে আসে বেশি। অপরাধ বিজ্ঞান বলছে, প্রান্তিক মানুষের জনবহুল স্থানে সচেতনতার অভাব এবং নিরাপত্তারও ঘাটতি থাকে। কিছু এলাকার চিহ্নিত মস্তান এবং মাদকাসক্তরা সমাজবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার কারণেই ঘনবসতি পূর্ণ স্থানে শিশু ও কিশোরীদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন বেড়ে যায়। এর প্রতিকারে চাই সামাজিক সচেতনতা। আরও বেশি করে ভাবতে হবে নারীকে মানুষ হিসেবে চিন্তা করার মানবিক দায়বদ্ধতা। নারী-পুরুষের ক্ষমতার ফারাকেও নারীকে তার মর্যাদা পেতে অনেক হিমশিম খেতে হয়। এমন সব সামাজিক বৈষম্যকে আমলে নিয়ে প্রতিকারের বিধান দেয়াও সময়ের দাবি। আইন, সমাজ, রাষ্ট্র, মানবিক মূল্যবোধ, মনুষ্যত্বের সচেতন মনোবিকাশ-সব মিলিয়েই এমন গর্হিত অপকর্ম প্রতিরোধ করতে হবে।