জেড.এম.শামসুল :
দেশে কিশোর অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা রোধে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে চরম মূল্য দিতে হবে। ফলে কিশোর অপরাধ রোধে বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থানের সু-ব্যবস্থা করুন, নতুবা কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনার বিকল্প নেই।
বর্তমানে সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ভাবে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। যাহা গ্রাম-গঞ্জের মানুষ আতংকগ্রস্ত। সাধারণ মানুষের আতংক সরাতে কিশোরদের অপরাধ দমনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। কিশোর অপরাধ রোধে বেকার শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবক-যুবতী সহ সর্বস্তরের যুব-সমাজকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়ত; কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, না হয় কিশোর অপরাধ আইন প্রয়োগ করে কিশোর অপরাধ দমন করতে হবে। কিশোর অপরাধ দমনে ব্যর্থ হলে সমাজ-পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
সিলেটসহ দেশব্যাপী যে পর্যায় কিশোর -কিশোরী, যুবক-যুবতী সহ বখাটেপনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা প্রকৃত ভাবে বিবেকমানদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই খবরের কাগজ খুললেই অপরাধের খবরা-খবরের ছক দেখে যে কোন সচেতন ব্যক্তিদেরকে ভাবিয়ে তুলে। এ ছাড়াও সংবাদ পত্রে প্রকাশ ছাড়াও অসংখ্যক অপরাধ প্রত্যন্ত্র অঞ্চলে ঘঠছে। যা সমাজও পরিবেশেকে দূষিত করে তোলছে।
অসংখ্যক সূত্র মতে, দেশে কিশোর-যুবক কর্তৃক বেকারত্বের কারণে, পারিবারিক অভাব-অনটনের ফলে প্রাথমিক স্তর থেকে লেখা-পড়া ছেড়ে দিয়ে কু-সঙ্গের পথে ধাবিত হয়ে পড়ে। অর্থ-উপার্জনের লক্ষ্যে অপরাধের সাথে জড়িতদের আশ্রয় নিতে গিয়ে এক সময়ে নিজেই অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। সেই বড়ভাই, গ্র“প লিডার, মস্তান রুপে প্রকাশ সমাজে, ডেকে আনে যত-প্রকার দুর্গতি, শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া-মহল্লা, রাস্তা-ঘাটে, সড়ক-মহাসড়কে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করছে। এরা মাঝে-মধ্যে পুলিশের খাঁচার ধরা পড়লে ও আইনের ফাঁক-ঝোঁকের কারণে খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসে। বাস্তবে এদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে অপরাধের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
দেশে এ সব অপরাধীরা মাদক, ইভটিজিং, অবৈধ অস্ত্র বহন, চুরি, ছিনতাই সহ ক্যাডারীতে জড়িয়ে পড়ছে এদের সংখ্যা দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরা সর্বত্র সকাল-বিকাল, এমন কি সব-সময় দু‘ চারজনের একেক সময়ে চারের অধিক একত্রিত হয়ে বিভিন্ন গ্র“প বিভক্ত হয়ে শহর নগরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক দিনের বেলায় হকারী পেশা হিসাবে কাজ করলে ও বেশী সময় অপরাধের সাথে জড়িত থাকে। এদেরকে প্রভাবশালীরা মুদদ দেয় বলে অনেকের ধারণা। এরা একেক জায়গায় একেক ধরণে অবস্থান নেয়। সুযোগ-বুঝে তাদের অপকর্ম চালাতে দ্বিধা বোধ করে না। এদের হাত থেকে কোন সাধারণ মানুষ রক্ষা পায় না। শহর-শহরতলিতে অহরহ জন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে ও অপরাধীরা তাদের অপরাধ ছালিয়ে যাচ্ছে।
দেশের অন্যান্য নগর-মহানগরের ন্যায় সিলেট অঞ্চলে বহিরাগত অপরাধীর সংখ্যা কম নয়। প্রতিটি অপরাধের সাথে সিলেটের বাহিরের অপরাধীরা আটক হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপরাধীরা এসে জমায়েত হয়ে, সিলেটে অসংখ্যক অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। সিলেটের সাধারন মানুষের সাথে বিভিন্ন ধরণে ভাব জমিয়ে বাসা-বাড়ীতে ভাড়া নিয়ে দিব্যি তাদের অপরাধ চালিয়ে যায়। যে সব অপরাধীরা ধরা পড়ছে তাদের স্থায়ী বাড়ীঘর সিলেটের বাহিরে বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়। এ ছাড়া ও সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সিলেটের বাহিরের বিভিন্ন বয়সের লোকজনের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। নগর-মহানগর বাহিরের লোকজনের ভারে-ভারী হয়ে উঠছে, বহিরাগতদের বিপুল উপস্থিতিতে নানা ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সব বাড়তি লোকজন নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গুলো সন্তোষ জনক নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে; দেশের শিশু-কিশোর, যুবকদের মধ্যে যে অপ-সংস্কৃতি কাজ করছে, যা অর্থের লোভে মাদক ও অস্ত্রের প্রভাব তাদেরকে আকৃষ্ট করছে। এ ছাড়া শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানিক ভাবে যথাযথ মনোযোগ পাচ্ছে না। এসব ছাড়াও রয়েছে, আকাশ-সংস্কৃতি যা শিশু-কিশোরদেরকে বিপথে নিচ্ছে। এ সব অপ-সংস্কৃতি‘র পরিসর দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সব সংস্কৃতির কারনে শিশু-কিশোররা এমনকি যুবকরা ও আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে সারাদিন ব্যস্ত থাকে।
শিশু-কিশোর ও যুবকদের অপরাধ সংস্কৃতি রোধে আইন-শৃংখলা বাহিনী তৎপর হয়েছে, কিন্তু এদের অপ-তৎপরতা কতটুকু সফলতা হচ্ছে, তা নিয়ে অনেক ভাবছেন। সমাজে অপরাধ সৃষ্টিকারীদেরকে দমনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, সমাজিক ভাবে সু-শৃংখলার জন্য সবক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি মালা প্রয়োগ করা। কর্মহীন ভাবে অবাধে যেখানে-সেখানে বিচরণ করা, সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতার প্রথা চালু করা। যে কোন কারণে পরিবার, প্রতিষ্ঠান বা প্রশাসনের কাছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করণের বিকল্প নেই।
আমরা দেখেছি, স্বাধীনতার পর একটি মহল রাজনীতির নামে দেশ বিরোধীদের সাথে আঁতাত করে বিশৃংখলার চেষ্টা করেছিল, তখন দেশে বিভিন্ন অপরাধ টেকাতে হাট-বাজার, শহর-নগরে জবাবদিহিতার প্রথা চালু করা হয়েছিল, এ সময়ে বখাটেপনা, অপরাধ নামের অপ-সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল।
সমাজের এ অপ-সংস্কৃতির অবসান ঘটানো অবশ্যই বাঞ্চনীয়। এ জন্য প্রয়োজন, আইনী পদক্ষেপের পাশাপাশি পারিবারিক, সমাজিক ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা। এ জন্য সমাজের সচেতন ব্যক্তি, শিক্ষক, পরিবারের অভিভাবক, প্রশাসনের সমন্বয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালাতে হবে। যা বিজ্ঞমহল মনে করেন।