বাংলাদেশের অর্থনীতির যে খাতটি করোনার কবলে পড়ে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি সেটি হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। এই খাতটি দেশীয় অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কর্মসংস্থান খুঁজে নেয় সমাজের বড় একটি অংশ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা নিজেদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অন্যের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে এই এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। প্রতিদিনের নানা পণ্যের চাহিদা মেটানোয় এই খাতটিরই অবদান সবচেয়ে বেশি।
সম্প্রতি একটি ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান করোনাকালে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সঙ্কট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যে বাস্তব পরিস্থিতির সুন্দর বিশ্লেষণ ঘটেছে। সোজাসুজি তিনি বলেছেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ যাচ্ছে না, কারণ ব্যাংকাররা তাদের চেনেই না এবং ব্যাংকারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কম। তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই অভিযোগ পাই, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পগুলো যথেষ্ট পরিমাণে ঋণ পাচ্ছে না। ঘটনা সত্য। কিন্তু তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেশি। আমাদের যেখানে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা দরকার, যারা দারিদ্র্যের ওপর বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে, প্রণোদনা প্যাকেজ কিন্তু তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে যাচ্ছে না।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আওতায় রয়েছে প্রধানত চামড়া ও পাটজাতপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, ট্রাভেল ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, ফ্যাশন পণ্য, হস্ত ও কারু শিল্পপণ্য, উপহারসামগ্রী, শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়া, বেডশিট, বালিশের কভার, বিভিন্ন বুটিকসামগ্রী, শোপিস, বাঁশ-বেতের পণ্য উৎপাদনকারী ছোট শিল্প। এগুলো সাধারণ এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। এমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের প্রায় ৭৮ লাখ প্রতিষ্ঠান রয়েছে সারাদেশে। এসব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিপণিবিতানে, ব্র্যান্ডশপে এসব খাতের প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য সরবরাহ করে থাকে। আবার ফেসবুক বা ওয়েবসাইট খুলে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করা হয়। তবে এসবের পাশাপাশি খাদ্যশিল্পের ভেতরে মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুর ব্যবসায়ী এবং এ খাতের খাদ্য ও ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোও সমস্যায় পড়েছে। অনেকে পণ্য পৌঁছতে পারছেন না। আবার অনেকে পণ্য তৈরি করতে পারছেন না। এতে খামারিরা যেমন খাদ্য, ওষুধ পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন, আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে লোকসানে।
জনকল্যাণমূলক সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সার্বিক সহায়তাদান। করোনাকালে দেশের অর্থনীতিতে গতি আনার লক্ষ্যে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে তাকে সফল করে তোলা সব পক্ষেরই মানবিক দায়িত্ব। দেশবাসীর প্রত্যাশা, মানুষ বাঁচাতে সরকারের গৃহীত প্রণোদনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আন্তরিকতার পরিচয় দৃশ্যমান হবে। দুঃসময় কাটাতে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণই কাম্য, সেকথা বলাই বাহুল্য।