জেলেদের সমস্যা উত্তরণের উদ্যোগ

121

সমুদ্র আর নদ-নদী পরিবেষ্টিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ বদ্বীপ বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ এই অঞ্চলের প্রকৃতির অবারিত দান। আর মাছ উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের প্রতিদিনের জীবনও এক লড়াকু অভিযাত্রা। মাছে ভাতে বাঙালী এই চিরায়ত প্রবাদটি যেমন নদীমাতৃক বাংলার অভাবনীয় প্রাপ্তি, পাশাপাশি অসংখ্য মৎস্য চাষীদের সঙ্কটাপন্ন যাপিতজীবনও কখনও সুস্থির আর নির্বিঘ্নে কাটে না। প্রথমত তাদের প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেই বসবাস। নিজেদের সুরক্ষা দেয়াও এক প্রকার চ্যালঞ্জ। অনিশ্চিত বটে তাদের জীবন পরিক্রমা। মাছ উৎপাদনে আমরা বিশ্বের তৃতীয়তম অবস্থানে। নদ-নদী আর সমুদ্রের অববাহিকায় গড়ে ওঠা মানুষের চলমান জীবন এক সূত্রে গাঁথা। নদী তীরের অধিবাসীদের যে লড়াকু জীবন চিত্র সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া সেভাবে কোন জায়গা করে নিতে পারেনি।
মৎস্য সম্পদে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদা রাখলেও হরেক রকম বিধিনিষেধও মৎস্যজীবীদের প্রতিদিনের কর্মযোগ। শুধু নিয়মকানুন মানা ছাড়াও রুদ্র প্রকৃতির দুরন্ত রোষ তাদের অসহায় করে তোলে। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ভর করে অনাকাক্সিক্ষত বিপন্নতা। যেমন বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার ওপর এক প্রকার কঠোর নিয়ন্ত্রণ আসে। তখন বেকার মৎস্যজীবীদের যথেষ্ট প্রণোদনা দেয়াও বিশেষ জরুরী। মাছ ধরা যখন বন্ধ থাকে তখন জেলেদের রুজি রোজগারও হুমকির মুখে পড়ে। বর্তমান সরকার সেখানে কিছু প্রণোদনা দিলেও সকলের কাছে তা পৌঁছায় না। এ ছাড়া চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এত অপ্রতুল যে তাদের প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন হতে সময় নেয় না। সেখানে পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা প্রদান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতন দায়বদ্ধতা।
দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর শিকলে বাঁধা এসব মৎস্যজীবী উত্তরাধিকার সূত্রে যে জীবন পায় সেখান থেকে অন্য কোন উন্নত ধারার অনুপ্রবেশ সেও এক কঠিনতম সাধনা। তার ওপর এসে ভর করেছে করোনার মহাদুর্বিপাক। লকডাউনের দুঃসময়ে এসব খেটে খাওয়া জেলের জীবনে যে অনিশ্চয়তা নেমে আসে তাও সংশ্লিষ্টদের নানাভাবে তাড়িত করে। কিছুদিন আগেও ছিল সারাদেশে মা ইলিশ ধরার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা। বিনিময়ে সংশ্লিষ্টদের ২০ কেজি করে চাল দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কিঞ্চিত তা বলাই বাহুল্য। এর আগে জাটকার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছর নবেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। সেখানেও মৎস্যজীবীরা এক ধরনে সমস্যায় পড়ে প্রতিদিনের জীবন নির্বাহে। সরকারী কঠোর নজরদারি উপেক্ষা করে অনেক জেলে মাছ ধরতেও মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
প্রশাসনের কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার মধ্যরাত থেকে আবারও জেলেরা উৎসবের আমেজে ইলিশ ধরতে শুরু করছেন। বাংলাদেশে পাঁচ লাখেরও বেশি উপকূলীয় মৎস্যজীবী সরাসরি ইলিশ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে বিপণন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত আছে আরও ৩০ লাখ মানুষ। ফলে নিত্য অভাব আর ন্যূনতম আয়ের আশায় আইন অমান্য করে জাটকা ইলিশ ধরার চিত্রও দৃশ্যমান হয়। তবে মৎস্য সম্পদে ভরপুর এই দেশে সংশ্লিষ্ট উৎপাদকের নিয়মিত ও বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণে প্রাসঙ্গিক উদ্যোগ নেয়া সময়ের দাবি।