নীতি ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হয় প্রতিটি পেশার ক্ষেত্রেই। আর পেশাজীবীকে হতে হয় সৎ, আন্তরিক, পরিশ্রমী এবং পেশার প্রতি নিষ্ঠ-নিবেদিত অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রতিটি পেশার ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। তবু আমরা বিশেষ করে সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা রক্ষার কথা কেন বলি? কারণ, এটি এমন একটি পেশা যার ওপর সমাজের ভালমন্দ অনেকাংশে নির্ভর করে। গোটা দেশের মানুষের ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখের কথা যারা তুলে ধরেন, তারা যদি আদর্শহীনতা তথা অনৈতিকতার চর্চা করেন তবে বড় ক্ষতি হয়ে যায় দেশের। তাই একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব অপরিসীম। অথচ সমাজে হলুদ সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে প্রায়ই। এ কারণেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হয়েছে, নৈতিকতা বিবর্জিত হলুদ সাংবাদিকতা করবেন না। নিরপেক্ষ, বাস্তবমুখী এবং দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যবোধ থেকে সাংবাদিকতা করুন। নীতিহীন সাংবাদিকতা কোন দেশের কল্যাণ আনতে পারে না।
হলুদ সাংবাদিকতা বলতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন, রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকে বোঝায়। এ ধরনের সাংবাদিকতায় ভালমতো অনুসন্ধান বা খোঁজখবর না করেই দৃষ্টিগ্রাহী ও নজরকাড়া শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হলো সাংবাদিকতার রীতিনীতি না মেনে যেভাবেই হোক পত্রিকার কাটতি বাড়ানো বা টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা বাড়ানো। অর্থাৎ, হলুদ সাংবাদিকতা মানেই ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন, দৃষ্টি আকর্ষণকারী শিরোনাম ব্যবহার করা, সাধারণ ঘটনাকে একটি সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা করা, কেলেঙ্কারির খবর গুরুত্বসহকারে প্রচার করা, অহেতুক চমক সৃষ্টি ইত্যাদি। ফ্র্যাঙ্ক লুথার মট হলুদ সাংবাদিকতার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন, যার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো-ভুয়া সাক্ষাতকার, ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে এমন শিরোনাম, ভুয়া বিজ্ঞানমূলক রচনা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ভুল শিক্ষামূলক রচনার ব্যবহার।
সংবাদপত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চতুর্থ স্তম্ভ। রাষ্ট্রের কোন স্তম্ভই পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়, বরং পরিপূরক। সাংবাদিকতা অবশ্যই একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে নিজের জন্য নয়, ব্যক্তিবিশেষ কিংবা কোন শ্রেণী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। সে কারণেই এখন বহুল উচ্চারিত দুটি টার্ম হচ্ছে- হলুদ সাংবাদিকতা ও অপসাংবাদিকতা। এ দুটো আসলে একই। সাংবাদিক যদি ‘ভাড়াটে’ লোকের মতো তার পেশাকে ব্যবহার করেন তাহলে তা সমাজ তথা দেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। বলা সমীচীন, সংবাদপত্রকে প্রতিটি সূর্যোদয়েই পাঠক তথা দেশের নাগরিকদের সমীপে উপস্থিত হতে হয়। প্রতিদিনই তাকে সত্যবাদিতা ও ন্যায়নিষ্ঠার পরীক্ষা দিতে হয়। সংবাদপত্র সতত তাই জবাবদিহির মুখোমুখি। তার সম্পাদকীয় নীতি স্বচ্ছ, ইতিবাচক, গণমুখী ও দায়িত্বশীল হবে- এটাই প্রত্যাশিত।