কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে গাছ চুরি কোন ভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। উল্লুকসহ বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এই বনের টিলা থেকে রাতের আঁধারে গাছ চুরি চলছেই। ফলে বন্যপ্রাণীর জন্য বাড়ছে হুমকি ও বয়ে আনছে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি। সম্প্রতি বনের দু’টি টিলা ঘুরে কেটে নেয়া ৬টি গাছের তাজা গুঁড়ি পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উদ্যানের বাঘমারা বন ক্যাম্প সংলগ্ন মন্ত্রিরটিলা থেকে অতি সম্প্রতি মেহগনি ও চিকরাশি প্রজাতির ছয়টি গাছ চুরি হয়েছে। কালের সাক্ষী হয়ে পড়ে আছে এসব গাছের গুঁড়ি। এগুলোতে কোন মার্কিং করা হয়নি। বাঘমারা ক্যাম্পের সম্মুখে ও মুজিবের উঠনি টিলার কিছু অংশে গত আগষ্ট মাসের শেষে কেটে নেয়া চারটি গাছের গোঁড়া পরিত্যক্ত পাওয়া যায়। তবে এসব বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কিংবা সহকারী বন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয় না বা ঘুরে দেখানোও হয় না। কেটে নেয়া গাছের গুঁড়ি মাটি ও পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।
রেলপথ, সড়কপথ ও বিদ্যুৎ লাইনের ঝুঁকির মাঝে থাকা লাউয়াছড়া উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে। তার উপর গাছ চুরি বনের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। স্বল্প জনবলের কারণে বনের বিশাল এলাকা দেখভাল করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে বন্যপ্রাণী বিভাগ দাবি করছে। উদ্যানের লাউয়াছড়া, কালাছড়া ও চাউতলী তিনটি বনবিটের মধ্যে বিট কর্মকর্তাসহ আছেন মাত্র ১২ জন লোক। এদের সাথে দেখাশুনায় কিছু কো-ম্যানেজমেন্ট থাকলেও বর্তমানে তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব কো-ম্যানেজমেন্টের কিছু অসাধু লোকও গাছ চুরির সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কো-ম্যানেজমেন্ট সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দু’একদিন পর পরই গভীর রাতে কেটে নেয়া হয় গাছ। বনের মধ্যে সময় নিয়ে ঘুরে বেড়ালে এমন অসংখ্য গাছের গুঁড়ি পাওয়া যাবে। চোখে না পড়ার জন্য অনেক গাছে গুঁড়ি লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। কো-ম্যানেজমেন্টের কিছু সদস্যসহ স্থানীয় পর্যায়েও কিছু কর্মকর্তারা জড়িত আছেন। এসব বিষয়ে কিছু বলতে গেলেই রেঞ্জ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
তবে গাছ চুরি হওয়ায় বনের গভীরতা হ্রাস ও ফাঁকা হচ্ছে টিলাভূমি। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘ দিন ধরে রাতে বনের ভেতর থেকে বৃহদাকার গাছ গাছালি কেটে পাচার করছে। কেটে নেয়া এসব গাছের খণ্ডাংশ পিকআপ ও ঠেলাগাড়ি যোগে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়। ফলে হুমকির মুখে লাউয়াছড়া উদ্যানের জীববৈচিত্র্য।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন মোবাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন যতদিন থাকবে, ততদিন গাছ চুরি হবে। স্বল্প জনবল দিয়ে ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া বিশাল বন রক্ষা করা খুবই কঠিন। তাছাড়া সাংবাদিকেরা এসব বিষয় নিয়ে বেশি লেখালেখি করে। বর্তমানে কোন গাছ চুরি হচ্ছে না এবং গাছের গুঁড়িগুলো পূর্বের বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, স্বল্প জনবল হলেও বন রক্ষায় আমাদের যথারীতি দায়িত্ব রয়েছে। এখানে একটি গাছও যাতে চুরি না হয় সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। গাছ চুরি হওয়ার কোন সংবাদ নেই। তারপরও অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।