গো-খাদ্যের জন্য বিনষ্ট বিকি বিলের অগুনতি লাল শাপলা

8

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
ভাই, শাপলার কি খবর ? কবে ফুটবে ? এবার এতো দেরী কেনো ? অনেক দিন ধরে সেল ফোন কিংবা ম্যাসেঞ্জারে এ ভাবেই খোঁজ খবর নিচ্ছেন তমাল আহামেদ টিপু। যুক্ত রয়েছেন ট্রাভেলার্স অফ বাংলাদেশে। অবস্থান করছেন চট্টগ্রাম। শুধু তমাল আহমেদ নয়, ন্যাচার হান্ট বাংলাদেশ গাজিপুর তারেক মাহমুদ, দলছুট ভ্রমণ ডায়েরী লোপস সরকার ঢাকা সহ দেশের অনেক ট্যুরিস্ট ট্রাভেলার নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন বিকি বিলের। অদূরবর্তী মেঘালয়ের হাতছানিতে সকালের সোনা রোদে নীল জল রাশিতে প্রস্ফুটিত লাখো লাল শাপলার মিতালী দেখার ইচ্ছে পোষণ করছিলেন অনেকেই। কিন্তু এবার হাওরের নীল জলরাশিতে লাল শাপলা আর উঁকি দিচ্ছে না। তার আগেই স্থানীয় লোকজন গো খাদ্যের জন্য শাপলার ডাটা ও মূল কেটে নিচ্ছেন। সাথে হাওরে বিল জলাশয়ে জাল, ছাই, গুই দিয়ে মাছ ধরতে সমূলে উপড়ে ফেলে বিনষ্ট করছেন লাল শাপলা। হাওরের জলে গুটি গুটি করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিনষ্ট শাপলার শাখা মূল। ফলে অগুনতি শাপলার বিকি বিল এখন শাপলা শূন্য। খবরে যেমন দূর দূরান্তের অনেকট ট্রাভেলার ট্যুরিস্ট হতাশ হয়েছেন তেমনি হতাশ হয়েছেন স্থানীয় লোকজনও।
গত বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে গণ ম্যামে প্রচার পায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন ও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের বিকি বিলের প্রস্ফুটিত লাল শাপলা। গণমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার পর থেকেই বিকি বিলের খোজ খবর নেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণ পিপাসু লোকজন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন এ রকম একটি দৃস্টি নন্দন মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার বিল দেখে গত বছরই জেলার অন্যতম পর্যটন স্পটের তালিকায় বিকি বিলের নাম অন্তর্ভুক্তি করেন।
হঠাৎ প্রচার পাওয়ায় গত বছর দুর দুরান্তের পর্যটকদের উপস্থিতি তেমন ছিলো না। হাওর ঘুরে দেখার জন্য ছোট খাটে নৌকাও পাওয়া যেত না। এবার অনেক পর্যটকের উস্থিতির সম্ভবনা ছিলো। পর্যটকদের নিয়ে হাওর ঘুরতে অনেকে ছোট কাটো নৌকাও বানিয়েছেন। কিন্তু সবার মনেই হতাশার রেখাপাত। সবার একই জিজ্ঞাসা। হাওর পারের কিছু লোকজন শুধু ক’দিন গরু মহিষের খাবরের জন্য ও মাছ ধরার জন্য এ রকম একটি দৃষ্টিনন্দন শাপলা বিল কি ভাবে নির্মূল করে দিতে পারে?
বিকি বিলের লাল শাপলা নির্মূলের অবস্থার কথা জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জ জানতে পেরে বিলের চারপাশের গ্রামে নৌকা যোগে ও শাপলার ডাটা কেটে না নিয়ে যাওয়ার জন্য গত রবিবার দিনভর মাইকিং করেন। অপার সম্ভবনাময় একটি পর্যটন স্পট বাঁচিয়ে রাখার জন্য আহবান জানান বিকি বিল ও আশ পাশের গ্রাম সহ সবার কাছে। ততক্ষণে বিলে শাপলার অস্তিত্ব বিলীন।
চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি এ আর জুয়েল, তিনি জানান, গত বছর তিনি শাপলা বিলটি দেখতে এসেছেন। গত বছরই প্রথম প্রচার মাধ্যমে আসে এ বিলটি। এবার প্রচুর পর্যটক বিলে শাপলা দেখতে ভিড় জমাতো কিন্তু স্থানীয় লোকজন গরু মহিষের খাদ্যের জন্য শাপলার ডাটা কেটে নিয়ে যাওয়ায় শাপলার দেখা মিলছে না। ফলে পর্যটকরাও আর আসছেন না।
ফেইস বাংলাদেশ ট্রাভেল গ্র“প এর শাহীন আহমেদ বলেন, বিকি বিল সম্ভবত দেশের সবচেয়ে বড় শাপালার বিল, এ বিলের শাপলা তাহিরপুর কে দেশের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতো।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, তাহিরপুরের লাল শাপলার বিকি বিল তাহিরপুরের পর্যটন কে আরো সমৃদ্ধ করেছে, মনোমুগ্ধকর এ রকম নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য কে নিজের হাতে নষ্ট করা ঠিক হবে না। এর সৌন্দর্য রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।