দি ম্যান এন্ড কোম্পানির পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ॥ আব্দুল মুক্তাদির মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে কোম্পানির সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন

14
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন দি ম্যান এন্ড কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমদ মিছবাহ।

স্টাফ রিপোর্টার :
উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকাবস্থায় নিজেকে চেয়াম্যান দাবি করে দি ম্যান এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমদ মিছবাহর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে কোম্পানির সুনাম ক্ষুন্ন করছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির। এছাড়া তিনি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে যাচ্ছেন।
বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান শওকত হোসেন শামীম। তিনি গত ১২ অক্টোবর আব্দুল মুক্তাদিরের করা সংবাদ সম্মেলনের তথ্যাবলীকে ভুল দাবি করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাবলিও তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শাহ আজিজুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সেক্রেটারী মরহুম আব্দুল ওয়াদুদ এবং সিলেট চেম্বারের তিন মেয়াদের সভাপতি ফারুক আহমদ মিছবাহর উদ্যোগেই মাত্র ১০ জন পরিচালক নিয়ে ১৯৯৭ সালে এ কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়।’
এর পরই দি ম্যান এন্ড কোম্পানি লিমিটেড ডেভেলপার হিসাবে নিজস্ব জমিতে ১ম প্রকল্প গার্ডেন টাওয়ার, ২য় প্রকল্প অর্কিড গার্ডেন, ৩য় প্রকল্প ¯প্রীং গার্ডেন ও ৪র্থ প্রকল্প খাদিম প্রজেক্ট শুরু করে। এ সময় আর্থিক প্রয়োজনে ও ব্যবসার সুবিধার্থে আরও ১০ জন পরিচালক নেয়া হয়। পরবর্তী ৩টি প্রকল্পের কাজ সফলতার সাথে শেষ হলে ২০০৩ সাল থেকে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি ও ভাড়ার মাধ্যমে ফ্ল্যাট বাড়ী ও দোকান হস্তান্তর করেছেন তারা।
তিনি বলেন, শুরু থেকে কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হোটেল গার্ডেন ইন্ ও গার্ডেন হেলথ ক্লাব পরিচালনা করা হচ্ছিল। তবে কোম্পানির প্রবাসী কয়েকজন পরিচালকের অনুরোধে ২০১৭ সালে এ দুটি প্রতিষ্ঠানসহ টাওয়ার-৫, খাদিম গার্ডেন হাউজিং প্রকল্পের মূল্য বোর্ড সভায় নির্ধারণ করে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। তবে ২০১৮ সাল থেকে ৩/৪ জন পরিচালক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য উল্লেখিত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা ও অসহযোগিতা করে আসছিলেন।’
এর কারণ হিসেবে কোম্পানির কাছে প্রতিয়মান হয়, ‘কোম্পানির ৫নং টাওয়ারের ৫টি ফ্লোর নিয়ে অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক সরদার এম.এস. ফাউন্ডেশনের নামে শাহজালাল সিটি কলেজ স্থাপন করেন। পরবর্তীতে গার্ডেন হেলথ ক্লাবসহ সম্পূর্ণ টাওয়ার ভাড়া গ্রহিতা হিসাবে দখলে রাখেন তিনি। তিনি কৌশলে গত ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল হোটেল গার্ডেন ইন্ পরিচালক মরহুম মামুনুর রশিদের নামে ভাড়া নিয়ে ব্যবসাও করছিলেন। পরবর্তীতে আব্দুল মুক্তাদিরের ছেলে নওশাদ আল মুক্তাদির ও মো. আহছানুজ্জামান মাছুম ম্যানেজমেন্ট পার্টনার হিসাবে হোটেলটি পরিচালনা করেন। এছাড়া আব্দুস সামাদ ঠিকাদারী ব্যবসা পরিচালনার জন্য ৩/৪ বছর যাবত খাদিমে কোম্পানির ক্রয়কৃত ভূমির একাংশের উপর মিক্সার প্ল্যান্টসহ পাথর স্টক ও এলোপাথারী বড় বড় ড্রাম ট্রাক ও ভারী গাড়ী রাখার কারণে ও বিটুমিন কারখানা স্থাপন করে ভূমি দখল করে আছেন। এমতাবস্থায় কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরও তাদের দখলে থাকায় সম্পত্তি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, সবশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শাহজালাল সিটি কলেজ ও গার্ডেন ক্লাব-এর নিকট কোম্পানির পাওনা ৪৫,৯৩,২৬১ টাকা হওয়াতে কোম্পানি চুক্তিপত্র নবায়ন করেন নাই। এ বিষয়ে উক্ত বোর্ড সভায় মো. এনামুল হক সরদার, আব্দুল মুক্তাদির ও আব্দুস সামাদের উপস্থিতিতে আলোচনাও হয়। এ সময় এনামুল হক সরদার বকেয়া টাকা আগামী দুই বছরের মধ্যে পরিশোধের অঙ্গীকার করলে পুনরায় এম.এস, ফাউন্ডেশনের নামে শর্ত সাপেক্ষে চুক্তিপত্র নবায়ন করা হয়। তাছাড়া আব্দুল মুক্তাদির হোটেল গার্ডেন গার্ডেন ইন এর বকেয়া টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে উক্ত সভায় অঙ্গীকার করেন। কিন্তু আব্দুস সামাদ খাদিম প্রকল্পে কোম্পানির ক্রয়কৃত ভূমির দখলে রেখে বিটুমিন কারখানা স্থাপন করে পরিবেশ দূষণ করে আসছেন এ কথা কোম্পানির কোন সভায় উল্লেখ করেননি।
লিখিত বক্তব্যে শওকত হোসেন শামীম বলেন, ২০১৮ সালে ২৬ জুন কৌশলে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চেয়ারম্যানের পদ থেকে এনামুল হক সরদার সরে দাঁড়ান। এ বোর্ড সভায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যান নিয়োগের এজেন্ডা ছাড়াই আব্দুস সামাদ ও সিরাজুল ইসলাম পরিচালক আলহাজ্ব নজীব আলীকে নিয়ে চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রস্তাব করান। এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা করে আব্দুল মুক্তাদিরকে কোম্পানির সাময়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ২১ মার্চ কোম্পানির জরুরি সভা আহবান করা হয়। উক্ত সভায় আব্দুল মুক্তাদির ও আজাদ উদ্দিন উপস্থিত হয়েও স্বাক্ষর বহিতে স্বাক্ষর না করেই সভা বয়কট করেন। পরবর্তীতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বোর্ড সভায় ৩নং আলোচ্যসূচি অনুযায়ী তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যান নিয়োগ পান। এর আগে কোন কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডকে অবহিত না করে এ মাসের ৫ সেপ্টেম্বর আব্দুল মুক্তাদির সাহেব কোম্পানীর ইজিএম আহবান করেন। পরবর্তিতে তারা ব্যাংক হিসাব জব্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনিয়ম ও আর্থিক অসচ্ছলতার অভিযোগ এনে সিলেট জজ কোর্টে মামলা করেন। মামলা চলমান আছে।
এছাড়া আব্দুল মুক্তাদির, আব্দুস সামাদ, মোঃ এনামুল হক সরদার কোম্পানির সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য জয়েনও ষ্টকে আবেদন করেন। বিগত ২০ সেপ্টেম্বর আব্দুস সামাদ ও সিরাজুল ইসলাম সাহেব কোম্পানীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দুইটি মামলা দায়ের করেন। এ দুটি মামলাগুলো চলমান আছে। এমতাবস্থায় মামলা চলমান থাকলেও আব্দুল মুক্তাদির নিজেকে কোম্পানির চেয়ারম্যান দাবি করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমদ মিছবাহর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশে মান হানিকর বক্তব্য দিয়ে সাংবাদিক সম্মেনের আয়োজন করে কোম্পানির সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। তিনি আরও জানান, কোম্পানীতে বর্তমানে বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৩ জন পরিচালক ও ৩ জন শেয়ার হোল্ডার আছেন। সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমদ মিছবাহ, পরিচালক আলহাজ্ব নজীব আলী- এম.জে.নাজনীন, শাহ ফাহাদ ইবনে আজিজ, শাহ নাজরা সুলতানা লিসাসহ পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।