ভারতে করোনার মৃত্যুকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে লকডাউনের মৃত্যু

15

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে যে লকডাউন ঘোষণা, সেই লকডাউনেই একের পর এক মানুষ মরছে ভারতে। এমন হয়েছে যে করোনার মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফেলছে লকডাউনের মৃত্যু। গতকাল সন্ধ্যায় মারা যান এক ব্যক্তি যিনি দিল্লি থেকে হেঁটে সোয়া ৩০০ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশের নিজ গ্রামে ফিরছিলেন। এ নিয়ে লকডাউনে মৃত্যু দাঁড়াল ১৭। আর এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতে লকডাউনে যারা মারা গেছে, তারা পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিজন। এর মধ্যে পাঁচজন শিশূ রয়েছে। লকডাউনে পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে তারা দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিলেন। পথে ক্ষুধা ও অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয় তাদের।
এখনো দিল্লির রাস্তায় রাস্তায় শত শত পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়, যারা লকডাউনে আটকা পড়েছেন। ক্ষুধায় কাতর।
গতকাল সন্ধ্যায় যে পরিযায়ী শ্রমিক মারা যান, তিনি মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলার ৩৮ বছরের রণবীর সিংহ। দিল্লি থেকে ৩২৪ কিলোমিটার দূরে নিজ গ্রামে ফিরবেন বলে গত শুক্রবার হাঁটা দিয়েছিলেন। অর্ধভুক্ত অবস্থায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি হাঁটার পর আর পারলেন না। নিজের গ্রাম থেকে প্রায় ১২৪ কিলোমিটার দূরে আগরা হাইওয়েতে গতকাল সন্ধ্যায় লুটিয়ে পরড়ন তিনি। রণবীর দিল্লির এক রেস্তোরাঁয় ডেলিভারি এজেন্টের কাজ করতেন।
এদিকে দিল্লির রাস্তায় হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড় হওয়ায় দিল্লির অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (পরিবহন) রেণু শর্মা এবং অর্থ দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজীব বর্মাকে বরখাস্ত করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব ভল্লার সভাপতিত্বে জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (আবাসন) সত্য গোপাল এবং সীলমপুরের মহকুমা শাসককে। সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, লকডাউনের সময়ে জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন এই আমলারা।
গতকাল দিল্লির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শয়ে শয়ে লোককে হাঁটতে দেখা গিয়েছে আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাসের দিকে। বহু স্কুলে অস্থায়ী শিবির খোলা হচ্ছে। শ্রমিকদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, লকডাউন চলাকালে তাদের তিন বেলার খাবারের ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।
এদিকে, কাশ্মীরের শোপিয়ান থেকে বরফ ভেঙে দুই দিন হেঁটে জম্মুর পুঞ্চে পৌঁছেছেন ২৪ জন শ্রমিক। সবাই এখন কোযারেন্টিনে।
হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে, যারা পরিযায়ী শ্রমিক নন। কর্ণাটকে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আটজন।
সুরাটে গতকাল হাসপাতাল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে মৃত্যু হয় ৬২ বছরের এক বৃদ্ধের। এমনকি বিহারের ভোজপুরে ১১ বছরের একজন বালক অনাহারে মারা গেছে বলেও অভিযোগ।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার বলছে, এ হিসাব ধরলে সারা দেশে করোনা সংক্রমণের জেরে যত মৃত্যু হয়েছে, তাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলছে লকডাউনের জেরে মৃত্যু।