মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথপুর পৌরসভার উপ-নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যে কারণে নৌকার সহজ জয় ও জগ এবং ধানের শীষের অপ্রত্যাশিত ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনী পর্যালোচনায় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। নির্বাচনের দিন পৌর এলাকার মোট ১১টি কেন্দ্র সরজমিনে পরিদর্শনকালে ও স্থানীয় ভোটার এবং বিভিন্ন দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আলাপচারিতায় এসব তথ্য পাওয়া যায়।
বিগত ২৯ মার্চ নির্বাচন হলে হয়তো ফলাফল অন্য রকম হতো। তখন করোনার কারণে নির্বাচন স্থাগিত হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর আবার ১০ অক্টোবর নির্বাচন হয়। এ ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনী এলাকার চিত্র অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ ৬ মাসের মধ্যে করোনা ও বন্যা সহ দুর্যোগকালীন সময়ে দুর্গত মানুষের পাশে ছিলেন মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া ও তাঁর পরিবার। বিষয়টি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে সাড়া জাগিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনী মাঠে। এছাড়া আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী, শুভাকাক্সক্ষী, আত্মীয়স্বজন এবং ভূঁইয়া গোষ্ঠীর অসংখ্য লোকবলের দিনরাত পরিশ্রম ও সর্বাত্মক সহযেগিতায় নৌকার সহজ জয় হয়েছে। সেই সাথে নির্বাচন পরিচালনায় ছিল তাঁদের কৌশলগত অগ্রগতি। তাছাড়া মিজানুর রশীদ ভূঁইয়ার পিতা জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ৫ বারের সফল ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতি অনেক মানুষ আজও ভুলতে পারেননি। যে কারণে নৌকার বিজয় আরো সহজ হয়েছে। তাই ৬১৬৭ ভোট পেয়ে বিশাল ব্যবধানে মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে-সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ আবদুল মনাফের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। যে কারণে তিনি কয়েকবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনে সাবেক মেয়র আবদুল মনাফের ছেলে আবুল হোসেন সেলিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জগ প্রতীক নিয়ে নৌকার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও পরাজিত হন। এর কারণ হিসেবে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে জানান, করোনা ও বন্যা সহ দুর্যোগকালীন সময়ে আবুল হোসেন সেলিমকে মানুষ পাশে পাননি। যার জনক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে নির্বাচনী মাঠে। তাঁর পিতা সাবেক মেয়র আবদুল মনাফ অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেও সব সময় পৌর এলাকার অসহায় মানুষের পাশে রয়েছেন। সেই তুলনায় সেলিমকে মানুষ পাশে পাননি। যে কারণে তাঁর প্রথমে সাজানো নির্বাচনী মাঠে পরিবর্তন দেখা দেয়। পরে আবার অল্প সময় বেধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ মাঠে নেমে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ছিল তাঁর নিজস্ব লোকবলের সংকট। নিজের মানুষ ঝুঁকির মুখেও ঝাঁপিয়ে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। পরের লোক ঝুঁকি দেখলেই কৌশলে পিছিয়ে যায়। তিনি নির্বাচনী মাঠ আগের মতো সাজাতে পারেননি। সাধারণ ভোটারের দেয়া ভোট রক্ষা করতেও পাহারাদার হিসেবে অনেক জনশক্তির প্রয়োজন হয়। নির্বাচন পরিচালনায় ছিল কৌশলগত অনেক ত্র“টি ও সমন্বয়হীনতা। যার প্রভাবে আবুল হোসেন সেলিমের জগ প্রতীকে মাত্র ৩৬৩৭ ভোট পেয়ে রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে। যা অপ্রত্যাশিত।
অন্যদিকে-বিএনপির মেয়র প্রার্থী রাজু আহমদ বিগত নির্বাচনে সাবেক মেয়র আবদুল মনাফের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হলেও এবার তাঁর করুণ ভরাডুবি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে জানান, করোনা ও বন্যা কালীন সময়ে মানুষের পাশে না থাকায় রাজু আহমদের পূর্বের সাজানো মাঠে ধস নেমেছে। এবার অল্প সময় বেঁধে দেয়া নির্বাচনে হঠাৎ করে আসাটা মানুষ মেনে নিতে পারেননি। ছিল তাঁর জনবল সংকট। বিএনপি বিরোধী দল হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরাও তেমন ভাবে সহযোগিতা করতে পারেননি। নির্বাচন পরিচালনায় ছিল কৌশলগত ত্র“টি। ছিল সমন্বয়হীনতা। ছিল আস্থা ও বিশ্বাসে ভাটা। যে কারণে তাঁর করুণ ভরাডুবি হয়েছে। এবার তিনি মাত্র ১৩৩৪ ভোট পেয়েছেন। যা কোন অবস্থায় মেনে নিতে পারছেন না কেউ। এমন পরাজয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলেন, হয়তো প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করেছে বিএনপি। তা না হলে এমন লজ্জাজনক ফলাফল হওয়ার কথা নয়। আগামীতে রাজু আহমদের থেকে আরো বেশি জনপ্রিয় ও জনশক্তি সম্পন্ন প্রার্থী থাকলে দিতে হবে। না হলে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেয়া ঠিক হবে না। এর চেয়ে প্রথম বারের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবিবুল বারী আয়হান ১০১৬ ভোট পেয়েছেন। তাঁর না ছিল দলীয় সমর্থন। না ছিল টাকার জোর। তবুও তাঁকে মানুষ ১০১৬ ভোট দিয়েছেন।
যদিও এবার ভোট কাষ্ট খুব কম হয়েছে। ১১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬ কেন্দ্রে তুলনামূলক ভোট কাস্ট হলেও অন্য কেন্দ্রগুলোতে কাক্সিক্ষত ভোট কাস্ট হয়নি। যার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। এর মধ্যে কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেন সেলিম ও বিএনপি প্রার্থী রাজু আহমদ নির্বাচন বর্জন করেছেন। শুধু জনবল সংকটের কারণে এসব প্রতিরোধ করতে পারেননি বর্জনকারী এ দুই প্রার্থী বলে অনেকের অভিমত। তবে বিভিন্ন অপরাধে ৮ জনকে আটক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটগণ।