শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্বেগের আপাতত অবসান ঘটিয়ে শেষ অবধি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলো। নতুন পদক্ষেপ নির্ধারণ হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে। প্রায় ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এক প্রকার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে তাদের উত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য করা হবে। ছয় মাস ধরে করোনা সংক্রমণের চরম দুঃসময়ে স্থবিরতার আবর্তে পড়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আপাতত সমাধান হলেও তা নিয়ে হরেক রকম প্রশ্নও উঠে আসছে। ১ এপ্রিল নির্ধারণ করা ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়। কিন্তু করোনা দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনার যে অবরুদ্ধতার যাঁতাকল সেখানে সবচেয়ে বেশি নাজেহাল অবস্থায় আছে শিক্ষা কার্যক্রম। সঙ্গত কারণে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও খোলা একেবারে অসম্ভবের পর্যায়ে। কবে খুলবে তাও ধারণার অতীত। সমস্ত শ্রেণী পরীক্ষাও স্থগিত অবস্থায়। সেখানেও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরবর্তী ক্লাসে উত্তরণের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বলা যায় অটো প্রমোশনের নিরিখে। তবে সুপারিশ এসেছে আগের ক্লাসের অসমাপ্ত পাঠক্রম নতুন শ্রেণীতে পুনরায় বিবেচনায় আনতে হবে। আর সেভাবেই নতুন ক্লাস তার ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাবে। করোনার বহুল সংক্রমণে একমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষাই নিয়মিত পরীক্ষার আওতায় তার কার্যক্রম শেষ করে। মূলত আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশেষ করে প্রাইমারী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিবর্তে শ্রেণী পাঠের বিভিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে তা যাচাই করার নির্দেশনা আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ড থেকে। বিশেষ করে আগের শ্রেণী পরীক্ষার ভিত্তিতে এই উত্তরণপর্বকে নির্ণয়ক হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। সুতরাং শুধু মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মেধা ও মনন যাচাই কতখানি প্রাসঙ্গিক সেটাও আলোচনাসাপেক্ষ। তার পরেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ওপর যে দুর্বিপাক নেমে এসেছে সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়াও সময়ের দাবি। অন্যান্য শ্রেণীপাঠসহ পরীক্ষাগুলো অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রিত হলেও সব ক্ষেত্রে তা সর্বজনীন এবং নির্ধারিত হয়নি। এইচএসসি এবং সমমানের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ পরীক্ষার্থীর আপাতত উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার শেষ হলো।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয় উত্তরণপর্বে আন্তর্জাতিক বিধিমালা অনুসরণ করেই তা পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে। জেএসসি এবং এসএসসি বোর্ড পরীক্ষায় যারা পাস করেছেন তাদের যেমন উত্তীর্ণের আওতায় আনা হবে তেমনি যারা বিফল হয়েছে তাদের ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে কর্তৃপক্ষের। করোনা দুর্যোগের আগে কখনও সরকারী পরীক্ষা বাতিলের মধ্যে পড়েনি। আগের পরীক্ষার ফলাফলের মূল্যায়নের ওপর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের যেভাবে বিবেচনায় আনা হবে সেখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত। তা হলো উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির প্রস্তুতিই শুধু নয়, পরীক্ষা নিয়েও ভাবতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সেখানেও কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা দেখার বিষয়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই মুহূর্তে এর বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়াও কঠিন ছিল। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই অভিমত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রবেশ সুন্দর হোক এটিই প্রত্যাশা।