স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে গাড়ির ভেতর পালাক্রমে গণধর্ষণের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃত ৮ আসামিই একে একে আদালতে স্বীকার করলেন ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা। সর্বশেষ গতকাল রবিবার ৪ অক্টোবর মামলার এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮) ও ৬ নম্বর আসামী মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫) আদালতে ফৌজধারী কার্য্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। গতকাল ৩ ঘন্টা পর্যন্ত পৃথক আদালতে তারা এই জবানবন্দি প্রদান করে।
জবানবন্দী প্রদানকারী তারেক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের নিসর্গ ৫৭ নং বাসার মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র বর্তমানে মেজরটিলা দিপিকা আবাসিক এলাকার ৫নং বাসার ৩য় তলার বাসিন্দা এবং মাসুম কানাইঘাট থানার গাছবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা।
আদালত সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার দুপুর ২টার দিকে তারেকুল ইসলাম তারেককে সিলেট অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম-১) মো: জিয়াদুর রহমানের আদালতে এবং মাহফুজুর রহমান মাসুমকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরাণ (র.) থানার পুলিশ পরিদর্শক ই›ন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য। ৩ ঘণ্টাব্যাপী আসামিদ্বয়ের স্বীকারোক্তি শেষে ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য জানান, ২ আসামির জবানবন্দি পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দিতে তারা ধর্ষণকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বেচ্ছায় স্বীকার করেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গত শুক্রবার ও পরদিন শনিবার এই ২দিনে ৬ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলাম এবং গত শনিবার রনি, রাজন ও আইনুদ্দিন আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে। এর আগে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে ৮ আসামীকে একে একে আদালতে জবানবন্দী শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হলো।
শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, ৫ দিনের রিমান্ড শেষে ৮ আসামীকে আদালতে জবানবন্দী শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বেড়ানো শেষে বাড়ি ফেরার পথে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এমসি কলেজের গেইট থেকে ৫-৬ জন যুবক জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে নিয়ে যায় দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর গ্রামের বর্তমানে চকেরবাজার এলাকার এক দম্পতিকে। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে ১৯ বছরের গৃহবধূকে দলবেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আসামীরা। এ ঘটনায় পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর শনিবার ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা (নং-২১) দায়ের করেন ভুক্তভোগীর স্বামী মাইদুল ইসলাম। এ জঘ্যতম ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। পরে ৪ দিনের মাথায় সিলেটের র্যাব-পুলিশ সিলেটের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারনামীয় ৬ আসামী ও সন্ধিগ্ধ ২ আসামীসহ মোট ৮ আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।