কাজিরবাজার ডেস্ক :
২০১৪ সালে লিজে আনা দুটি ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজে গত ছয় বছরে ১১০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। প্রতি মাসে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ১১ কোটি টাকা।
আজ রবিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৪তম বৈঠকে এ তথ্য জানান বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক।
কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, লিজে নেয়া উড়োজাহাজ দুটোর দায় দেনা থেকে গত মার্চে বিমান মুক্ত হয়েছে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, ‘এ বিমান দুটি চালিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২২০০ কোটি টাকা, আর খরচ হয়েছিল ৩৩০০ কোটি টাকা। মোট লোকসান ১১০০ কোটি টাকা।
বৈঠকে সিনিয়র সচিব আরও জানান, বিমান লিজ সংস্কৃতি থেকে একেবারে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এ বছর নতুন তিনটি ড্যাশ-৮ বিমান আসার কথা ছিল। তার মধ্যে দুটো এ বছরের মধ্যে বিমানবহরে যুক্ত হবে, আর অন্যটা জানুয়ারিতে যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। এ বিমানগুলো ২৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কেনা হয়েছে।
বৈঠকে কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক এবং সৈয়দা রুবিনা আক্তার অংশ নেন।
সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, বিমানের লিজ প্রক্রিয়াটা স্পষ্ট নয়। এ প্রক্রিয়ার সময় বিষয়টা নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তিনি।
জানা যায়, ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে দুটি উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে। এক বছরের কম সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবার ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। গত ডিসেম্বরে নষ্ট হয় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও। পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। লিজ নেয়া ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান উভয়কেই অর্থ দিতে হয় বিমানকে।
বৈঠকে সিনিয়র সচিব আরও বলেন, জুলাই মাসে বিমান ১৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। তার আগের মাসে আয় ছিল ১৬৯ কোটি টাকার মতো। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের কাছ থেকে বিমান ১০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকা খরচ হবে না বলে তিনি কমিটিকে জানান।
বৈঠকে আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) বিল, ২০২০, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজিন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ সালের বাজেট ব্যবহার এবং বৈশ্বিক করোনা মহামারি প্রতিরোধে মন্ত্রণালয় গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় বলে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো তথ্য বিবরণীতে বলা হয়।
এ ছাড়া বৈঠকে ‘আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) বিল ২০২০’-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন সাপেক্ষে জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে উপস্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত হয়।