কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রভাবশালী বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ বেড়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের ঢাকাস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে দলটির সিনিয়র নেতাদের ঘনিষ্ঠ বৈঠক হয়েছে।
পাশাপাশি নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা করতে কিছু দিনের মধ্যে ব্রাসেলস যাওয়ার কথা রয়েছে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার। এরপর একাধিক নেতা এ সফরের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে লন্ডনে দলের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে মিলিত হবেন।
আলাপকালে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ দেখতে চেয়ে ইতোমধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো প্রকাশ্যে মত দিয়ে আসছে। বিএনপি এসব মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী একাধিক রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে বিএনপির।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সূত্রগুলো বলছে, আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র ও সুশাসনে কী কী ভূমিকা রাখবে, এর সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতি শুনতে অনেক পক্ষ আগ্রহী।
বিএনপির ফরেন উইংয়ের গ্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের প্রধান ইস্যু হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন আছে কিনা। তারা দেখতে চায় তারা যাদের সহযোগিতা করে, তারা আইন মানছে কিনা, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে কিনা। ফলে, এখানে সবার আগের কনসার্ন হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন।’
বিএনপির নির্ভরযোগ্য নেতারা জানিয়েছেন, ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের বিষয়টি নিয়ে ঢাকাস্থ অনেক দূতাবাসের পক্ষ থেকেই জানতে চাওয়া হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে, বিষয়টি সম্পন্ন করা যাবে, বাস্তবতা কতখানি, এসব বিষয়ে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের নেতারা প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনদের কোনও জবাবদিহি নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এখানে গণতন্ত্র দেখতে চায়।’
প্রভাবশালী একটি সূত্র জানায়, গত রমজানে প্রতিবেশী একটি দেশের আমন্ত্রণে ইফতার আয়োজনে অংশ নেওয়ার পর আবারও দেশটির প্রভাবশালী এক কর্তার আমন্ত্রণে হাজির হয়েছিলেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা। ওই সাক্ষাতেও দেশের সামগ্রিক রাজনীতি ও নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা হয়। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না; বিষয়টি জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। পাশাপাশি, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তি কী হবে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির কী হিসাব থাকবে, এসব আলোচনাও উঠেছে।
যদিও এ নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে দ্বিমত আছে। গত ২৯ মে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মন্তব্যেই বিষয়টি পরিষ্কার হয় ‘জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে কিছু দেশি-বিদেশি ফেরিওয়ালা নেমেছে। একটা নির্বাচনি হাওয়া তোলার জন্য একদিকে নির্যাতন, আরেক দিকে নিচ দিয়ে হাত মেলানোর চক্রান্ত চলছে। ভারত, আমেরিকা কোনও দেশের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন নেই। তবে জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক বিশ্বের সহযোগিতা আমাদের জরুরি।’
দলের অন্য কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা মনে করেন, দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ দক্ষিণপন্থী চিন্তা-ধারায় গ্রভাবিত হলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগামী দিনের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে স্থির হয়েছেন। ভিন্ন কোনও চিন্তা বিএনপির নীতিকে স্যাবোটাজ করতে পারবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির লক্ষ্যে বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে। এ দলগুলোকে সমন্বয় করেই পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে নেবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলের অবস্থান সক্রিয় রাখতে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন বিএনপির ফরেইন উইংয়ের গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য। সোমবার (২৭ জুন) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে এ প্রতিবেদককে তিনি তার সফরকে ‘ব্যক্তিগত সফর’ বলেছিলেন। তবে, রবিবার (২৬ জুন) বিকালে খবর পাওয়া গেছে, তার সফরে তিনি ওয়াশিংটনে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং সেগুলো ইতিবাচক হয়েছে।
দায়িত্বশীল একজনের ভাষ্য, ‘বিএনপির ফরেন উইংকে আবারও নতুনত্ব দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে কমিটির বিশেষ দায়িত্বে কোনও সিনিয়র নেতাকে দেখা যেতে পারে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্য বলেন, ‘বিগত দিনে নানা কারণে বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোর ওপর নেতিবাচক অবস্থান থাকলেও বিগত এক-দেড় বছরে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে বিএনপি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতির পক্ষে অবস্থান তুলে ধরছে।’
সূত্রের ভাষ্য, শীর্ষ নেতৃত্বের পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা সপ্তাহখানেকের জন্য বিদেশ সফরে যাবেন। সফরে তিনি ব্রাসেলস হয়ে লন্ডনে যাবেন। দেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গ্রয়োজন, সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিএনপি ও দলের নেতৃত্বের অবস্থান স্পষ্ট করতেই ইউরোপের একাধিক দেশে যাবেন এই নেতা।
জানতে চাইলে শনিবার (২৫ জুন) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিএনপি মানুষের পাশে রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সারাদেশে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রতিটি জেলায় বন্যার্তদের জন্য সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে। ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বন্যার্তদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ ও চাল বিতরণ করবো।’