কাজিরবাজার ডেস্ক :
ব্লগার অভিজিৎ রায়ের রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে আরেক ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান বাবুকে। এ ঘটনায় দুই তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে দুর্বৃত্তরা বাবুকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। গতকাল সকালে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন দক্ষিণ বেগুনবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে জিকরুল্লাহ (২০) ও আরিফুল ইসলাম (১৯) নামে দুই তরুণকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে জিকরুল্লাহ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা তাফসির ও আরিফুল মিরপুরের দারুল উলুম মাদরাসার ছাত্র। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ধর্মীয় মতাদর্শের জের ধরে বাবুকে হত্যা করা হয়েছে। বাবু তার ফেসবুক-ব্লগে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করেছেন এমন অভিযোগে মাসুম নামে এক ব্যক্তির নির্দেশনায় বাবুকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে তিনজন অংশ নিয়েছিল। ঘটনার পর দুজনকে আটক করলেও তাহের নামে এক তরুণ পালিয়ে যায়। নিহত বাবু ফেসবুক ও ইস্টিশন নামে একটি ব্লগে লেখালেখি করতেন। এর আগে গত ২৬শে ফেব্র“য়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার ও লেখক ড. অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার দক্ষিণ বেগুনবাড়ির ৪/৩/এ বিসমিল্লাহ মঞ্জিলের দোতলায় জাকির নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সাবলেট হিসেবে থাকতেন নিহত বাবু ও তার বাবা টিপু সুলতান। গতকাল ভোরে টিপু সুলতান গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাবু তার মতিঝিলের অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যেতেই তার ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তিন দুর্বৃত্ত উপর্যুপরি বাবুর মাথায় চাপাতি দিয়ে একাধিক আঘাত করলে বাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে দুর্বৃত্তরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন জিকরুল্লাহ ও আরিফকে আটক করে। ঘটনার সময় পাশেই শিল্পাঞ্চল থানার একটি টহল টিম এগিয়ে গিয়ে আটককৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ আহত বাবুকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা অনলাইনে নিজস্ব মতাদর্শ প্রচার নিয়ে বিরোধের জেরে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। ঘটনার তাহের নামে একজন পালিয়ে গেছে। উপকমিশনার বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আগের দিন জিকরুল্লাহ, আরিফ ও তাহের নিহত বাবুর বাসা রেকি করে যায়। সোমবার সকাল ৯টা থেকে তারা বাসার সামনে বাবুর জন্য অপেক্ষা করছিল। বাবু অফিসে যাওয়ার পথে তারা হামলা কলে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে দুটি চাপাতি ও আরিফের ব্যাগ থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত জিকরুল্লাহর শরীরে রক্তের দাগ লেগে ছিল।