ত্রাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ॥ প্রস্তুত থাকুন, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে

12
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি) এর সদস্য বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিগণের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের জন্য অনুদান গ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছে শীতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যদি আবার বাড়ে, তা মোকাবেলায় এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। সেজন্য হয়ত আমরা এটা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। তবে সামনে শীত, আরেকটু হয়ত খারাপের দিকে যেতে পারে। তবুও আমাদের এখন থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের এই মুহূর্ত থেকেই তা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
রবিবার ৩৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ ফান্ডে অনুদান গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই অনুদান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) এই অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
এই অনুদান সাধারণ মানুষের কাজে লাগবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বলেন, এটা ঠিক যে এই করোনাভাইরাসের কারণেই (সরাসরি উপস্থিত থেকে) দেখা হচ্ছে না। তবুও বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আপনারা যে কষ্ট করে এসেছেন আমার অফিসে, সেজন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সবাই সুস্থ থাকুন এটাই আমরা চাই। দোয়া করেন, দেশটা যাতে এই করোনাভাইরাসের মহামারী থেকে মুক্তি পায়। সারাবিশ্বই যাতে মুক্তি পায়। মানুষের সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে এই করোনাভাইরাসের কারণে।
দেশের ব্যাংকগুলো যেন ভালভাবে পরিচালিত হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যাংক মালিকদের বিভিন্ন দাবি সরকার ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে’ বিবেচনা করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু ব্যাংক আছে অতি দুর্বল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অনেক সময় মার্জ করাতে হয়। সেটা বিবেচনা করে দেখতে হবে কোনটা ঠিক মতো চলবে বা কোনটা চালাতে পারছে কিনা বা সেগুলো যাচাই করা দরকার। বিবেচনার বাইরে কিছু করা হবে না, এইটুকু ভরসা রাখবেন।
যে কোন দুর্যোগ, দুর্বিপাকে বিএবি সদস্যরা এগিয়ে আসায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাইভেটে ব্যাংকটা দেয়ার সিদ্ধান্ত আমরাই নিয়েছিলাম। আমরা দিয়েছি সব থেকে বেশি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ যাতে ব্যাংকিং ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়, তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। এমনকি কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সব থেকে বড় কথা আমরা যত বড় প্রাইভেট ব্যাংক দিয়েছি, ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান হয়েছে, অনেক মানুষের চাকরি হয়েছে। আর আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হয়েছে। সেখানে ব্যাংকগুলো যাতে ভালভাবে চলে আমরা সেটাও চাই।’
করোনাভাইরাস মহামারীতে মানুষের কষ্টের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সবার সুস্থতা কামনা করেন এবং ভাইরাসের প্রকোপ থেকে দেশ ও সারাবিশ্বের মানুষের মুক্তির জন্য দোয়া চান। আর্থিক অনুদান দেয়ার জন্য সংগঠনগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই এই পরিস্থিতিতে (করোনাকালে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে) অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। আর এ জন্যই আমরা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
কোভিড-১৯-এর অভিঘাত থেকে দেশের অর্থনীতিকে মুক্ত রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি সচল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি এবং যেখানে যা প্রয়োজন তাই দিয়েছি। কারণ জনগণের সেবা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ব্যাংকগুলো যাতে যথাযথভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করতে পারে সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জন্য বিএবিকে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমরা চাই যে, ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে তাদের কাজ পরিচালনা করবে। আপনারা যে সমস্ত যৌক্তিক দাবি আমার সামনে এনেছেন তা আমরা সবসময় বিবেচনা করেছি। ব্যাংক পরিচালনায় কোন সমস্যা থাকলে তা আমি বিবেচনা করব।
বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি)-এর নেতৃত্বে ৩৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক অনুষ্ঠানে ১৬৪ কোটি টাকা, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট ১০ লাখ টাকা, মিনিস্টার গ্রুপ ২৫ লাখ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৬০ লাখ টাকা, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশন ৪০ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে বলে সরকারপ্রধানের দফতর থেকে জানানো হয়।
অনুদান দেয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- এবি ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক (বিডি) লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি বাণিজ্যিক ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।
আরও ছয়টি সংস্থা- যেমন খাদ্য মন্ত্রণালয়, ফোসা (ফরেন অফিসার্স স্পাউস এ্যাসোসিয়েশন), রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল এমপ্লয়িজ এ্যাসোসিয়েশন প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে। অনুষ্ঠানে বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ অন্য ব্যাংক মালিক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।