সিলেট থেকে গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যে নব্য জেএমবির আরও চার সদস্য গ্রেফতার

14

শাহজালাল (রহ:) মাজারে হামলা চালানোর পরিকল্পনাকারী নব্য জেএমবির কমান্ডারসহ ৫জনকে গত ১১ আগষ্ট সিলেট থেকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবার রাজধানীর পল্টনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নব্য জেএমবির আর চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে উত্তরার আজমপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রহমান, মো. আল আমিন ওরফে আবু জিয়াদ, মো. মোজাহিদুল ইসলাম ওরফে রোকন ওরফে আবু তারিক ও সারোয়ার হোসেন রাহাত।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ জুলাই পল্টন এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় মোট নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পল্টনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ১১ অগাস্ট সিলেট থেকে নব্য জেএমবির পাঁচজনকে গ্রেফতারকরা হয়েছিল। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
জানা যায়, গত ২৫ জুলাই রাতে ঢাকার পল্টনে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের পাশে মোটর সাইকেল রেখে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট। রাত পৌনে ৯টার দিকে মোটর সাইকেলের কাছে এসে তিনি দেখেন, একটি পলিথিন ব্যাগ ঝুলছে। ভেতরে ‘গ্রেনেড সদৃশ’ একটি বস্তু দেখে তিনি দ্রুত পুলিশ বক্সে খবর দেন। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল গিয়ে ওই বোমা নিষ্ক্রিয় করে। তার একদিন আগে ২৪ জুলাই প্রায় একই সময়ে পল্টন মোড়ে কে বা কারা একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। ওই ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা হয় এবং ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই সিলেটে নব্য জেএমবির পাঁচজনকে ও বৃহস্পতিবার রাতে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, সিলেট থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)। গ্রেফতারের বিষয়টি সিটিটিসির পক্ষ থেকে ওই সময় নিশ্চিত করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে হামলার পরিকল্পনা করছিল। মঙ্গলবার (১১ আগষ্ট) রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৪৫/১০নং বাসার মুক্তিযোদ্ধা মইনুল আহমদের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বাসা থেকে বোমা, বোমা তৈরির এবং কিছু কম্পিউটার সরঞ্জাম উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। উদ্ধারকৃত কম্পিউটারে বোমা তৈরির বেশকিছু ভিডিও ছিলো।
পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে সিলেট নগরীর টিলাগড় শাপলাবাগে একটি বাসায় অভিযানে যায় পুলিশ ও র‌্যাব। জঙ্গি নাইম ও সায়েমকে নিয়ে শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার ৪০/এ ‘শাহ ভিলা’ বাসায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা একটি কম্পিউটার সেন্টারের সন্ধান পায়। ‘শাহ ভিলা’র মালিক শাহ মো. শামদ আলী জানিয়েছেন, নাইম ও সায়েম তার বাসার চারতলার ফ্ল্যাটটি গত দুই মাস আগে কম্পিউটার সেন্টার বানানোর জন্য ভাড়া নিয়েছে। কিন্তু তারা সেখানে অবস্থান করেন না।
গত রবিবার (৯ আগষ্ট) রাতে সিলেট নগরীর মিরাবাজার উদ্দীপন-৫১ নম্বর বাসা থেকে নাইমুজ্জামান নাইমকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি নব্য জেএমবির ‘সিলেট আঞ্চলিক কমান্ডার’ বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। নাইমের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার ভোরে পৃথক দুটি অভিযানে গ্রেফতার করা হয় আরো চারজনকে। তন্মধ্যে জালালাবাদ আবাসিক এলাকা থেকে সানাউল ইসলাম সাদীকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। এছাড়া টুকেরবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। নাইম ও সাদী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে তারা কোন বিভাগের শিক্ষার্থী, তা জানা যায়নি। এদের মধ্যে সায়েম নামের একজন মদনমোহন কলেজের ছাত্র। গ্রেফতারকৃত বাকি দুইজনের মধ্যে আরেকজন কলেজ শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। (খবর সংবাদদাতার)