স্টাফ রিপোর্টার :
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট অফিসের কম্পিউটার ডাটা অপারেটর দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের সেন গ্রামের বাসিন্দা হিমাদ্রী পালের স্ত্রী লাকী রাণী পাল শরীরে আগুন লেগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। রবিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন লাকীর শ্বশুর জালালপুর সেনগ্রামের বাসিন্দা মৃত নরেশ পালের পুত্র হলধর চন্দ্র পাল। হলধর পাল অভিযোগ করেন, লাকীর অপমৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা মামলায় রুপান্তর করতে অপপ্রচার ও নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন তার বোন প্রিয়াংকা রাণী পাল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হলধর পালের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র পাল। লিখিত বক্তব্যে হলধর চন্দ্র পাল বলেন, আমার বড় ছেলে হিমাদ্রী পাল দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আমার ছেলে হিমাদ্রী পালের সাথে প্রায় ৩ বছর পূর্বে ফেঞ্চুগঞ্জ থানার কঠালপুর গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে সিলেট নগরীর সোবহানীঘাটস্থ মৌবন ১০৪ নং বাসায় বসবাসকারী প্রদীপ পালের বড় মেয়ে লাকী রাণী পালের সাথে বিবাহ হয়। তাদের দেড় বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই কেটেছে। তবে মেয়ের পরিবার আমার ছেলেকে তাদের বাসায় স্থায়ীভাবে একাধিকবার নিয়ে যেতে চাইলে আমি রাজী হইনি। এমনকি আমার পুত্রবধূর বেতনের টাকা পুরোটাই তারা নিয়ে নিতে চায়। এ নিয়ে মেয়ের বোনদের সাথে আমার ছেলের একাধিকবার মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। তবে সেটা কোন বিরোধে রূপ নেয়নি।
তিনি বলেন গত ৯ আগষ্ট রাতে প্রতিদিনকার মত বউমা রান্নাঘরে মাটির চুলায় ভাত রান্না করছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে অসাবধানতা বশতঃ চুলার পাশে থাকা কুপি বাতি থেকে আমার বউমার শাড়িতে আগুন লেগে যায়। চিৎকার শুনে প্রথমে আমি রান্না ঘরের দিকে ছুটে যাই। করিডোরে বউমার শরীরে আগুন দেখে আমি আগুন আগুন বলে চিৎকার করি এবং কাথা কম্বল গায়ে জড়িয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী এবং পাশের বাসা থেকে আমার ছেলেরাসহ অন্যান্য লোকজন এগিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে আগুন নিভে গেলে আমরা দ্রুত লাকী রাণী পালকে সিএনজি অটোরিক্সা দিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আনুমানিক সাড়ে চারটার দিকে আমার পুত্রবধূ মৃত্যবরণ করেন। হাসপাতালে নেয়ার পর লাকী রানী পাল কর্তব্যরত চিকিৎসক ও তার পিতা প্রদীপ পাল এবং আমিসহ অনেকের সম্মুখে বলেছেন কুপি বাতি থেকেই তার শরীরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে ওইদিনই প্রদীপ পাল এসএমপির মোগলাবাজার থানায় হাজির হয়ে লিখিতভাবে তার মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ প্রেরণ করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার মেয়ের জামাতা হিমাদ্রী পাল, কাকাত ভাই শাওন পাল শুভসহ থানায় হাজির হয়ে জানাইতেছি যে, আমার মেয়ে লাকী রাণী পাল গত ৯ আস্ট রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে তার শ^শুর বাড়ির রান্না ঘরে রান্না করার সময় মাটির চুলার পাশে থাকা কুপিবাতি থেকে অসাবধানতাবশতঃ তার পরনের শাড়িতে আগুন লেগে সারা শরীর জ¦লসে যায়। আহত অবস্থায় তার শ^শুর বাড়ির লোকজন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার পর আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানি। হাসপাতালে রাত আনুমানিক সাড়ে ৪ টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে আমার মেয়ের লাশ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের কারো কোন অভিযোগ নেই। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’ এ ঘটনায় মোগলাবাজার থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামালা দায়ের করে। যার নং ০৬/২০। প্রদীপ পাল একইভাবে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিনা ময়না তদন্তে লাশ সৎকারের জন্য সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট আবেদন করেন। কিন্তু ঘটনার এক সপ্তাহ পর হঠাৎ করেই লাকী রাণী পালের ছোট বোন প্রিয়াংকা রাণী পাল গত ১৭ আগষ্ট মোগলাবাজার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩, যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো ও সহায়তার অপরাধ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। যা মোগলাবাজার থানার মামলা নং ১২ হিসেবে রুজু হয়ে বর্তমানে মহানগর হাকিম আদালতে মোগলাবাজার জি.আর ১১৬/২০২০ রূপে দায়েরী আছে।
তিনি বলেন, একটি অপমৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করতে লাকীর বোন প্রিয়াংকা রাণী পাল অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। তার বোনের মৃত্যুর তিন দিন পর প্রিয়াংকা রাণী পাল আমার বড় ছেলে হিমাদ্রীর নিকট ১০ লক্ষ টাকা দাবী করেছিলেন যেটা দিতে আমরা অস্বীকৃতি জানাই। পিতার কথার অবাধ্য হয়ে স্বার্থ হাছিল করতেই প্রিয়াংকা মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাদের উপর মামলা দায়ের করেছেন। মোগলাবাজার থানা পুলিশ ঘটনার তদন্ত না করেই মামলাটি রুজু করেছেন।
হলধর চন্দ্র পাল বলেন, প্রিয়াংকা রাণী পাল এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে একের পর এক অপপ্রচার চালাচ্ছে। যেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মানহানীকর। আমাদের কোন বক্তব্য না নিয়ে এমনকি সরেজমিন তদন্ত না করে এসব সংবাদ ছাপানো হয়েছে। আমি তাদের এমন ভিত্তিহীন অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে হলধর পাল প্রিয়াংকা গংদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।