বন্যা আর করোনায় বাজার ঊর্ধ্বমুখি, এক মাসে আলুর দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা

50

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেটে বন্যা আর করোনায় জমিতে ফলন কম হওয়ায় সবজির দাম কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ভোক্তারা সবজি কম ক্রয় করছেন। যে সবজি এক মাস পূর্বে ভোক্তাদের নাগালের ভেতরে ছিল সে সবজি এখন নাগালের বাহিরে চলে গেছে। আর খুচরা বাজারে কাচামরিচ কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ও আলু ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত মাসে আলুর দর কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। গতকাল নগরীর খুচরা সবজির বাজার ঘুরে বিক্রেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
খুচরা সবজি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমদানী কম থাকায় সবজির দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। ফলে ব্যবসায় আমাদের প্রভিটটাও বেশী করে কাটাতে গিয়ে হিমশিম পোয়াতে হয়। অনেক দিন সবজি বিক্রি না হওয়ায় রয়ে যায়। বাসি ও পচে যায় এসব সবজি পরদিন ক্রেতারা কিনতে চায় না তাই অনেকটা ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে জানা গেছে, সিলেট মহানগরীর বাজারগুলোতে শীতের সবজিসহ সবধরণের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এ সব সবজির দাম গত এক মাসে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার অনেকটা মৌসুমী সবজির ফলন না হওয়ায় দাম ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গেছে। আর কাঁচা মরিচের দাম এক মাস পূর্বে ২০০ টাকা কেজি ছিল সেটা এখনও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে। আলু পাইকারী বাজারে কেজিপ্রতি ৩২ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কাঁচা মরিচ পাইকারী বাজারে ১৮০ টাকায় কেজিপ্রতি বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এটা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। ফলে ক্রেতারা এই কাঁচা মরিচ ক্রয় করছেন কম। বেগুন লম্বাটা বর্তমানে খুচরা বাজারে ৫০ টাকা, কাচকলা প্রতিকেজি ৪৫ টাকা, কারকুল কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিংগা কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৩০ থেকে আকার বেধে ৪০ টাকা, কুঁমড়া প্রতিটি আকার বেধে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মৌসুমী সবজি মুকি কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বেন্ডি ৪০ টাকা, পেঁপে ৩৫ টাকা, গাজর কেজিপ্রতি ৩০ টাকা, বরবটি কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, টমেটো কেজিপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, অমৌসুমী সবজি মুলা বর্তমানে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা, রসুন ৭০ টাকা, আদা ১৪০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সোবহানীঘাটের সবজি ব্যবসায়ী শফিক মিয়া জানান, কাঁচামাল বর্তমানে সিলেটে আসছে কম। এ জন্য সবজির দাম বেশী। তিনি জানান, বন্যায় ও করোনায় জমিতে সবজির ফলন কম হচ্ছে। এ জন্য আমদানী ও ক্রেতা কম।
ভৈরব জেলার বর্তমানে ছড়ারপারে বাসিন্দা ক্ষুদ্র আলু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানালেন, মুন্সিগঞ্জী লাল আলু ৫দিন পূর্বে কেজিপ্রতি ছিল ৩২ টাকা এখন এটা বেড়ে ৩৫ টাকা কেজি হয়েছে। ফলে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তরা আলু কিনছেন কম। তিনি প্রতিদিন বেলা ১১ টার দিকে সোবহানীঘাট সবজির আড়ৎ থেকে তার ভ্যানে ৩০০ কেজি আলু ক্রয় করে সন্ধ্যার আগে সেই আলু বন্দরবাজার ও সুরমা মার্কেট এলাকায় বিক্রি করে থাকেন। এর আগে রাত ১১ টার আগে সব আলু বিক্রি হয়ে যেত। এখন সেই আলু মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রি হয় না। অনেক সময় মেঘ-বৃষ্টি পড়ে আলু নষ্টও হয়ে যায়। ফলে পরদিন সেই আলু আর বিক্রি করা যায়না। তাই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
নেত্রকোণা জেলার বর্তমানে কালিঘাটের বাসিন্দা সবজি বিক্রেতা মো: রতন মিয়া জানান, আমদানী কম থাকায় সব ধরণের সবজির দাম বেড়ে গেছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার বর্তমানে ছড়ারপাড়ের বাসিন্দা মুকি ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানান, সবজির দাম বেড়ে যাওয়া ভোক্তারা সবজি কিনছে কম। যে মুকি কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছি এছাড়া মুকি বিক্রি না হলে পচন ধরার কারনে সেই মুকি ফেলে দিতে হয়। ফলে ক্ষতি হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা বর্তমানে ছড়ারপারের বাসিন্দা সবজি বিক্রেতা জহির মিয়া জানান, সোবহানীঘাট সবজির আড়ৎ থেকে সবজি ক্রয় করে সন্ধ্যার পর সুরমা মার্কেট এলাকায় বিক্রি করতে হয়। সেখানে পুলিশ অনেক সময় পাল্লা-পাথর নিয়ে সবজির গাড়ী পর্যন্ত নিয়ে যায়। সেদিন আর লাভ হয়না বরং বড় ধরনের লোকসান হয়।
নেত্রকোণা জেলার বর্তমানে দক্ষিণ সুরমা বাবনা পয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা রিপন মিয়া জানালেন, বর্তমানে তিনি ২০০ টাকা দরে কাচামরিচ বিক্রি করছেন। উৎপন্ন কম হওয়াতে দর বেড়ে যাওয়ায় মানুষ কাচামরিচ খাচ্ছে কম। অনেক সময় কাচামরিচ পচে গিয়ে ক্ষতি হয়ে থাকে।
টুকেরবাজারের ক্রেতা মখলিছ মিয়া জানালেন তিনি কাঁচা মরিচের দাম ২০০ টাকা হওয়া আড়াশ’ কাঁচা মরিচ কিনেছেন। বন্যার কারণে হয়তো কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে। তিনি জানান, আর এক কেজি আলু ৩৫ টাকা দরে কিনেছি। দাম বেশী থাকায় একপাল্লা অর্থাৎ ৫ কেজি আলু কিনে নিতাম।