স্টাফ রিপোর্টার :
খাদিমনগর ইউনিয়নের মহালদিক গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ উঠেছে লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আশরাফলু মতিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহালদিক গ্রামের মৃত হাজী আব্দুস সামাদের ছেলে সালাহ উদ্দিন আহমদ সালাই।
লিখিত বক্তব্যে সালাই বলেন, ‘মহালদিক এলাকার ১৮ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে গত ১২ জুলাই এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় লাক্কাতুরা চা বাগানের ম্যানেজার আশরাফুল মতিন চৌধুরী সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আমি এবং একই গ্রামের মৃত মজু মিয়ার ছেলে গত ২২ জুলাই গ্রেফতার হই এবং ১৬ দিন কারাভোগ করে জামিন লাভ করি। এ মামলায় আমরা সব আসামিই জামিনে আছি।’
তিনি বলেন, আশরাফুল মতিনের দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগটি তদন্ত ছাড়াই ১৪ জুলাই রেকর্ড করা হয় এয়ারপোর্ট থানায়। এ মামলায় গত ২২ জুলাই আমাকে ও অপর আসামি ইউনুসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিনই আদালতের মাধ্যমে আমাদের কারাগারে পাঠানো হয়। ১৬ দিন পর আমরা জামিনে মুক্তি পাই। এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন, একই গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে উস্তার আলী, আব্দুল মনাফের ছেলে ফারুক মিয়া, আলকাছ মিয়ার ছেলে ফয়ছল কামরান হেলন, পচা মিয়ার ছেলে ময়জুল মিয়া, সফিক মিয়ার ছেলে এলাইস মিয়া, আসগর আলীর ছেলে ছায়নুস মিয়া, আসদ্দর আলীর ছেলে হেকিম, আরজু মিয়ার ছেলে ময়নুল মিয়া, মাখন মিয়ার ছেলে আনসার আলী, রইস আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন, মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে আজিম মিয়া, ওয়াহিদ ওরফে মকই মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া, মোশাইদ আলীর ছেলে আব্দুল হান্নান, কয়ছর মিয়া, এমরান মিয়া ও তাজ উদ্দিন রাজা।
সালাই বলেন, মামলার অভিযোগে ম্যানেজর আব্দুল মতিন যেসব মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাদের কারো বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ কোনকালেই কেউ করেনি। গত ১২ এপিল চৌকিদারের উপর হামলা চালিয়েছি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তারও কোন ভিত্তি নেই। আর মুর্তার জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে চৌকিদারের ঘরে বেড়া, বাঁশ গাছ মাটি ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে আমরা বাগানের ১৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটিও মিথ্যা। তিনি বলেন, বাগানের লাখ লাখ টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনলেও থানায় অভিযোগ দিলেন ৯০ দিন পর। আসল সত্যকে পাশ কাটিয়ে বাগানের ম্যানেজার মনগড়া অভিযোগ দিয়ে সমাজে আমাদের মান-সম্মান ভুলণ্ঠিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমাদেরই এলাকর কিছু দরিদ্র মানুষ বাগানের জুরকুড়ির টুক নামক জায়গায় একটু উঁচু আইল তুলেছিলেন মাছ ধরার সুবিধার্তে। যারা তুলেছিলেন তাদের একজন ইউনুস মিয়া। বাগানের বাবু হিসেবে পরিচিত মিন্টু ইউনুসের কাছে আইল থাকা ও ওই জায়গাটি ভোগ করতে দেয়ার বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। ইউনুস তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তাছাড়া বাগানের অন্য একটি অংশের জায়গা নিয়ে পাকিস্তান আমল থেকে ইউনুসের মায়ের সাথে বাগান কর্তৃপক্ষের মামলা চলছে। এটিও বাগান কর্তৃপক্ষের রুষ্ট হওয়ার কারণ বলে আমরা মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, কয়েকমাস আগে খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ ও সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে আমরা হাজী আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমির ফুল বাগানের জন্য ছোট একটু জায়গা চেয়েছিলাম। তারা বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের তা দিয়েও ছিলেন। একাডেমির শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সেখানে আমরা খুব ছোট একটি পুকুর দিয়ে তার পাড়ে বাগান করা হয়েছে। পুকুরে শিক্ষার্থীরা নামাজের জন্য ওজু করতে পারে। এজন্য কোন সমস্যা হবেনা- এমন আশ^াস দিয়ে বাগানের চৌকিদার আলিমুল্লাহর ছেলে বুরহান আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকাও নিয়েছে। কয়েক মাস আগে এই বাগানেরই ৮/১০ কেদার জায়গা দখল করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ফিসারি করা হয়েছে। আরো অনেকে সরকারের কোটি কোটি টাকার ভূমি দখল করেছে, এসব নিয়ে বাগান ম্যানেজার বা কর্তৃপক্ষ টু শব্দটিও করছেন না। উল্টো বিনা কারণে, বাচ্চাদের ওজুর ব্যবস্থা করতে দেয়ার অপরাধে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে জেল খাটানো হয়েছে। সালাহ উদ্দিন আহমদ সালাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।