কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভয়াল ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তাঁর ছেলে তারেক রহমান এবং তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সরাসরি জড়িত মন্তব্য করে বলেছেন, সরকারের মদদ না থাকলে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা ঘটানো সম্ভব হতো না। আমি জানি না, আল্লাহ বোধহয় এ কারণেই বাঁচিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য যাতে কিছু করতে পারি। নইলে এই রকম অবস্থা থেকে বেঁচে আসা, এটা অত্যন্ত কষ্টকর।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ রচনা করে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কাছে ক্ষমতা হচ্ছে দুর্নীতি করে টাকা বানানো। তারা যে দুর্নীতি করে গেছে এবং দুর্নীতির যে বিষবৃক্ষ রচনা করে গেছে বাংলাদেশে, আজকে তার কুফল বাংলাদেশ ভোগ করছে। আমরা সরকারে আসার পর এক এক করে সেগুলো ধরছি, উদঘাটন করছি। তারেক রহমানের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, দুর্নীতির এত টাকা যে, বিদেশে গিয়ে, এই ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার আসামি, যে সাজাপ্রাপ্ত, সে যেভাবে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে, কই আমরা তো পারি না। কোথা থেকে পাচ্ছে এত টাকা? সেটাই তো প্রশ্ন।
২১ আগষ্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে ২১ আগষ্টের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পর বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
শুধু গ্রেনেড হামলা নয়, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানেই (২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা) তারা ক্ষান্ত হয়নি। আমেরিকায় সজীব ওয়াজেদ জয়, আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। সেখানে ধরা পড়ল কার কাছে, আমেরিকার যে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাদের হাতে। তাদেরই তদন্তে এটা বের হয়। এফবিআই যখন এটা তদন্ত করে সেখানে বিএনপি নেতা দোষী সাব্যস্ত হয় এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, সেখানে যে রায় দেয় তাতে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান এবং শফিক রেহমানের নাম বেরিয়ে এসেছে, তারা এর সঙ্গে জড়িত। যে শাস্তি পায় সে তারেক জিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল, জয়কে যে হত্যা করবে, এটা আমরা কখনও জানতে পারতাম না যদি এফবিআই এটা খুঁজে বের না করত।
ভয়াল ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা ঘটায়। এর সঙ্গে তার ছেলে তারেক রহমান যে জড়িত সেটাও যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদেরই কথায় বেরিয়ে এসেছে- তারা কোথায় মিটিং করেছে, কীভাবে এই ষড়যন্ত্র করেছে।
তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসীদের এক জায়গায় করা, তাদের ট্রেনিং দেয়া, তাদের আনা, পরবর্তীতে তাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া। তাদের মনে হয়েছিল আমি মারা গেছি। যখন শুনেছে আমি মারা যাইনি তখন তাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ওই হামলাকারীরা তারা যাতে নির্বিঘ্নে ওই এলাকা ত্যাগ করতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছিল। কাজেই সরকারের মদদ না থাকলে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা এভাবে হতে পারে না।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি সরকার যদি এর সঙ্গে জড়িত না-ই থাকবে তাহলে তারা আলামতগুলো কেন নষ্ট করবে? ওই গ্রেনেড হামলার পরেই সিটি কর্পোরেশনে তখন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা তার লোকজন নিয়ে এসে পুরো এলাকা ধুয়ে ফেলে। আর যে গ্রেনেডটা ওখানে পাওয়া গিয়েছিল রমনা ভবনের কোণায়, আরেকটা ওই স্পটেই ছিল বিস্ফোরিত হয়নি। আরেকটা বিস্ফোরিত হয়েছে আমি যখন ওখান থেকে চলে আসি গাড়ি নিয়ে ঠিক তার পরেই। সেই গ্রেনেডটা একজন সেনা অফিসার এটিকে আলামত হিসেবে রাখতে চেয়েছিলেন বলে খালেদা জিয়া তাকে চাকরিচ্যুত করেছিল। কোন আলামতই তারা রাখতে চায়নি। তারপর আপনারা জানেন একটা নাটক সৃষ্টি করে।
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খালেদা জিয়া জড়িত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একেকটা ঘটনা ঘটাবার আগে খালেদা জিয়ার বক্তৃতার ভাষা এবং যখন কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল তার আগে বলেছিল যে, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্বে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধীদলীয় নেতাও কোনদিন হতে পারবে না।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই ভবিষ্যত বাণী খালেদা জিয়া কীভাবে দিয়েছিল? কারণ তাদের চক্রান্তই ছিল যে, আমাকে তারা হত্যা করে ফেললে তাহলে তো আমি কিছুই হতে পারব না। এটাই তাদের চক্রান্ত ছিল। প্রতিটি ঘটনার আগে তাঁর বক্তৃতা যদি সবাই অনুসরণ করেন- এই কথাগুলোই বলেছে।
বিএনপি সরকার যদি এই হামলার সঙ্গে জড়িত না-ই থাকবে, তাহলে তারা কেন আলামত নষ্ট করল- সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন, এটা কি তারা কখনও চিন্তা করেছে? কেন সেই সময় আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না নিয়ে সেখানে টিয়ারগ্যাস মারা হলো আর লাঠিচার্জ করা হলো? যারা নিজের আপনজনকে তুলতে গিয়েছে, পুলিশ তাদের লাঠি মেরে সরিয়ে দিয়েছে, কেন তারা সাহায্য করবে। ওই হামলাকারীরা যাতে নির্বিঘ্নে ওই জায়গা ত্যাগ করতে পারে, সেই সুযোগটা করার জন্যই তারা এটা করেছিল। সরকারের মদদ না থাকলে গ্রেনেড হামলা এভাবে হতে পারে না।
২১ আগষ্টের ঘটনা নিয়ে সংসদে তৎকালীন বিরোধী দলকে কোন কথা বলতে দেয়া হয়নি জানিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক সংসদ সদস্যই এই গ্রেনেড হামলায় আহত। আমরা যখন এটার ওপর আলোচনা করতে চাইলাম, একটা রেজ্যুলেশন (প্রস্তাব) নিতে চাইলাম অপোজিশন থেকে। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা হতে দেয়নি। আলোচনা করতে দেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এ রকম একটা ঘটনা ঘটে গেছে, আমি বিরোধী দলের নেতা। আমার ওপর এই রকম গ্রেনেড হামলা। বিরোধী দলে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি দল, যে দল স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। সেই দলের সভায় এই রকম গ্রেনেড হামলা। আর পার্লামেন্টে যিনি সংসদ নেতা, বলে দিল ওনাকে আবার কে মারবে? তখন তো বলতে হয় আপনিই (খালেদা জিয়া) তো মারবেন। চেষ্টা করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন। সেই জন্য আর পারছেন না। এই রকম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আমাদের কোন কথা বলতে দেয়নি এই হামলা সম্পর্কে। আমাদের কাউকে মাইক দেয়নি। আলোচনা করতে দেয়নি। এতে কী প্রমাণ হয়, যদি তারা সরাসরি জড়িত না থাকত তাহলে কি তারা এতভাবে বাধা দিত?
গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই গ্রেনেড হামলাটা হলো। সাধারণত একটা সভ্য দেশ হলে কী করত? সঙ্গে সঙ্গে পুলিশসহ সবাই ছুটে আসত আহতদের সাহায্য করতে, উদ্ধার করতে, চিকিৎসা করতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। সেখানে কোন রোগী ঢুকতে পারবে না, যেতে পারবে না, চিকিৎসা নিতে পারবে না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বিএনপির কোন ডাক্তার সেখানে উপস্থিত নেই। যাদের ডিউটি ছিল তারাও নেই। কারণ আহত রোগীদের চিকিৎসা করবে না। আমাদের যারা ডাক্তার তারা সেখানে ছুটে গিয়েছিল, তাঁরাই সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে কত হাসপাতাল, কত ক্লিনিক আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর বোধহয় আমরা জানতে পারি। সমগ্র ঢাকা শহরে নেতা-কর্মীরা যে যেখানে পেরেছে আহতদের সেখানে নিয়ে গেছে।
গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এই ধরনের গ্রেনেড হামলা বোধহয় পৃথিবীতে আর কষনও, কোথাও ঘটেনি। সাধারণত রণক্ষেত্রে, যুদ্ধক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমাদের সেই র্যালিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই এই ঘটনাটা ঘটিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু সেদিন আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ নেতাকর্মী শাহাদাতবরণ করেছেন। সেই সঙ্গে অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে পরে মারা গেছেন।
মানুষের জন্য কিছু করার জন্যই আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশকে তারা একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব করেছিল। আমি জানি না, আল্লাহ কেন বাঁচিয়ে রেখেছেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য যাতে কিছু করতে পারি সেই জন্যই হয়ত বাঁচিয়ে রেখেছেন। নইলে এ রকম অবস্থা থেকে বেঁচে আসা, এটা অত্যন্ত কষ্টকর। তিনি বলেন, এর আগে বহুবার বিভিন্ন হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মতো ভয়াবহ হামলা হতে বেঁচে যাওয়া নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছু কাজ রেখে দিয়েছেন, সেটা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত হয়ত কাজ করে যেতে পারব। আল্লাহ সেই সুযোগ দেবেন, আমি সেটুকুই চাই। সেই কাজটুকু করে যাব। দেশটাকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা। এর পর ৩ নবেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কথাও এ অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় যারা জড়িত ছিল, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই চক্রান্তের সঙ্গে খন্দকার মোশতাক যেমন জড়িত, সেই সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত। জিয়াউর রহমান জড়িত এই কারণে, খন্দকার মোশতাক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান করে। আবার জিয়াউর রহমানই সেনাবাহিনী প্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, একটি পরিবারকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেছে, তাদেরকেই বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, পুরস্কৃত করে।
খুনীদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের ‘ঘনিষ্টতা ছিল মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, এটা তো খুনী কর্নেল রশিদ, কর্নেল ফারুক তাদের বিবিসিতে ইন্টারভিউতে খুব স্পষ্টভাবে বলেছে এবং তারা পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান যে তাদের সঙ্গে একটা যোগাযোগ এবং তাদের সঙ্গে যে সম্পূর্ণ সম্পর্ক ছিল, এটা তো আজকে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। আর তারই স্ত্রী খালেদা জিয়া, সে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই এই ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা ঘটায় এবং এর সঙ্গে তার ছেলে তারেক রহমান যে জড়িত, সেটা তো ওই যারা ষড়যন্ত্রে জড়িত তাদেরই তো কথায় বের হয়ে এসেছে যে, তারা কোথায় মিটিং করেছে, কীভাবে ওই ষড়যন্ত্র করেছে।
খুন-সন্ত্রাস-দুর্নীতি বিএনপির অভ্যাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে যাদের খুন করাই অভ্যাস, এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। এরা বিশ্বাস করে, ক্ষমতা হচ্ছে দুর্নীতি করে টাকা বানানোর উপায়। তারা যে দুর্নীতি করে গেছে, দুর্নীতির যে বিষবৃক্ষ রচনা করে গেছে সারাদেশে, আজ তার কুফল বাংলাদেশ ভোগ করছে। আমরা সরকারে আসার পরে এক এক করে সেগুলো ধরছি, উদঘাটন করছি।
গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দলের যেসব নেতাকর্মী মারা গেছেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আমি যখন আহ্বান করেছি যে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, ত্রাণ দিতে হবে। আমাদের আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আর কোন রাজনৈতিক দল এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে কাজ চালিয়ে যেতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্মরণসভায় সশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে না পারলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে যুক্ত হতে পারাকেও সরকারের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। এর পেছনে নিজের সন্তান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, আজ খুব দুঃখ হচ্ছে যে আমি আপনাদের মাঝে এই জায়গায় আসতে পারলাম না। কিন্তু আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বা জুমের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সেজন্য আমি জয়কে (সজীব ওয়াজেদ জয়) ফোন করেছিলাম, তাঁকে ধন্যবাদও দিয়েছি। বলেছি, তুমি যদি ডিজিটাল পদ্ধতি না করে দিতে, তাহলে আজ এভাবে আমরা কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে পারতাম না, সব স্থবির হয়ে থাকত।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করেছে। তাঁর স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তাঁর স্বপ্ন পূরণে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করোনায় সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখছি। দেশটা যেন আরও সামনে এগিয়ে নিতে পারি সেজন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব, এটাই হলো প্রতিজ্ঞা।
আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপসহ দলের কেন্দ্রীয়, মহানগরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আওয়ামী লীগ নেতারা ২১ আগষ্টে নিহতদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী সৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।