সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স নবায়নে সীমাবদ্ধতার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে সিলেট প্রাইভেট হসপিটাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনে এসোসেয়িশেন সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ নানা সীমাবন্ধতার কারণে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আগামী ২৩ আগষ্টের মধ্যে নবায়নের চূড়ান্ত সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে অথচ এ বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন আমাদের সবধরনের সহযোগিতা করলেও মূলত অধিদপ্তরের কালক্ষেপণের কারণে নবায়ন নিয়ে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। এজন্য সংকট থেকে উত্তোরণে সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
সোমবার নগরীর নূরজাহান হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘করোনা সংকটকালীন সময়েও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনেক সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে আমাদের। তবুও পূর্ব প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী জুনের পর থেকে একজন রোগীও বিনা চিকিৎসায় কোন হাসপাতাল থেকে ফেরত যাননি বলেও দাবি করেন।’ তিনি বলেন, দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে যখন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ব্যস্ত, তখন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলে চলমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হবার আশঙ্কাও রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সরকারের নিয়ম অনুসারে এতোদিন ধরে লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন করে আসছে এবং ২০১৭/১৮ সাল পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই তা চলে আসছে। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অটোমেশন পদ্ধতিতে সবকিছু কম্পিউটারাইজড় করার পর আর কোন নবায়ন করেনি। এ কারণে দীর্ঘ তিনবছর ধরে আমরা নবায়নের অপেক্ষায় আছি। এমনকি ২০২১ সাল পর্যন্ত নবায়নের সরকারি ফিও জমা দিয়ে এসেছেন।’
এমনিতেই করোনাকালীন সময়ে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। জনগণ ও হাসপাতাল মুখোমুখি করে নতুন কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি যাতে তৈরী করা না সে জন্য সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করে তিনি উল্লেখ করেন, যে হাসপাতালগুলো ২০১৭/১৮ এর আগে লাইসেন্স নবায়ন করেনি বা সুনির্দিষ্ট অনিয়ম করেছে, এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাদের কোন দায়িত্ব নেয়া হবে না এবং কোন ধরনের অন্যায়ের প্রশ্রয়ও দেবেন না বলেও অঙ্গীকার করেন তিনি।’
তিনি করোনা সংকট কালীন পরিস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত সময়ে লাইসেন্স নবায়নে সীমাবন্ধতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘লাইসেন্স নবায়ন কিংবা আবেদনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ লাইসেন্স নবায়ন ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আবশ্যক করেছে, যা এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা কেবল দুরুহই নয় অসম্ভবও বটে। একই সাথে প্রায় প্রতিটি ছাড়পত্র ও নবায়নের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। এদিকে সিটি কর্পোরেশন ৫০ শয্যার হাসপাতালের ট্রেড লাইসেন্স ফি ৫০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা ধার্য করেছে।’
করোনাকালীন সময়ে অন্যান্য চিকিৎসা থেকে হাসপাতালগুলোর আয় যখন শূন্যের কোঠায়, স্বাস্থ্যবিধি মানা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বাবদ ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ, তখন ট্রেড লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন নবায়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি আরো গভীর সংকট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আয় করে যাওয়া ও পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বহু হাসপাতাল ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে, আরো যদি বন্ধ হয় তাহলে স্বাস্থ্য সেবায় যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হবে তা মোকাবেল করা নিশ্চিতভাবেই কঠিন হবে বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় প্রাণ হারিয়েছেন চিকিৎসকরা। সিলেটেও চিকিৎসকসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হারিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের সকল কার্যক্রম সারা বিশ্বে প্রশংসিত। এই উদ্যোগ যাতে আরও কার্যকর থাকে, আর যাতে করোনায় কাওকে হারাতে না হয় সেজন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোর নিঃসংকোচ সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক বলেও মনে করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যগণের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ডা. মো. আবু ইউসুফ ভূঞা, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আজিজুর রহমান রোমান, কোষাধ্যক্ষ জাকির আহমদ চৌধুরী, ডা. মোতাব্বীর হোসেন ও ডা. মুনিম আহমদ। বিজ্ঞপ্তি