ওসমানীনগরে নিজ বাসা থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বৃদ্ধার গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আটক ২

13

শিপন আহমদওসমানীনগর থেকে :
ওসমানীনগরে নিজ বাসা থেকে রহিমা বেগম আমিনা (৬৫) নামের এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী বৃদ্ধা গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার গেয়ালাবাজার ইউপির নিজ করনসী রোডের তেরহাতি এলাকার নিহতের নিজ বাসা থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তেরর জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহত রহিমা বেগম উপজেলার উমরপুর ইউপির কটালপুর গ্রামের মৃত আখলু মিয়ার স্ত্রী। তিনি গত ২ বছর ধরে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে গোয়ালাবাজারস্থ করনসী রোডের তেরহাতি এলাকায় নিজ মালিকানাধীন বাসায় একাই বসবাস করে আসছেন। পুলিশ ধারণা করছে, নিহতের পরিচিত অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা নিজ বাসায়ই ধারালো অস্ত্র দিয়েকে মাথায় একাধিক কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার পর রহিমা বেগমের লাশ বাথরুমে রেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে খুনিরা নিহতের বাসার কলাপসেবল গেইটের ভেতরে একটি বাহিরে ২টি তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। নিহত রহিমা বেগমের ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেছেন বলে জানা গেছে।
প্রবাসী রহিমা বেগম খুনের ঘটনায় সন্দেহজনক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের ভাড়াটিয়া ইস্পাহানি কোম্পানীর ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম ও একই কোম্পানীর ড্রাইভার খুরশেদ আলমকে পুলিশ আটক করেছে।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রহিমা বেগমের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকা তার আত্মীয় স্বজন বিভিন্ন স্থানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ফোনে রহিমার খোঁজ করেন। কোথাও তাকে না পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এসে বাসাটি তালবদ্ধ দেখতে পান নিহত রহিমার ছোট ভাই আব্দুল কাদির সহ অন্যান্য স্বজনরা। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করা হলে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পুলিশ নিহতের স্বজনদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসার তালা ভেঙ্গে রহিমা বেগমের রক্তাক্ত মেত দেহ বাথরুমে পড়ে থাকতে দেখেন।
এদিকে খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর (সার্কেল) রফিকুল ইসলাম, ওসি শ্যামল বণিক। পুলিশ সুপারের সাথে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব ব্যুরো (পিবিআই)ওসি সিআইডির দুটি টিম ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ সহ তদন্ত করেছেন।
নিহত রহিমা বেগমের ভাই আবদুল খালিক (৪৫) বলেন, কে বা কারা আমার বোনকে গলা কেটে হত্যা করে লাশ নিজ বাসার বাথরুমে গুম করে ফেলে যায়। মঙ্গলবার থেকে বোনের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিলো। খোঁজ নিতে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বাসায় এসে বাসার গেইটে তালা বন্ধ দেখতে পাই। পরে পুলিশকে নিয়ে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে বোনের গলা কাটা লাশ দেখতে পাই। জানা মতে আমার বোনের সাথে এলাকার কারে সাথে কোনা শত্র“তা নেই তবে বোনের বাসার ভাড়াটি ইস্পাহানির কোম্পানির লোকজনের সাথে বোন রহিমা বেগমের বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া হতো। কোম্পানীর লোকজন আমার বোনকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করত। আমার বোনকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম প্রবাসী রহিমা বেগম খুন হবার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট খুনিরা নিহতের পূর্ব পরিচিত। নিহত রহিমা বেগমের বাসার আসবাবপত্র সহ কোনো জিনিসই খুয়া যায়নি সব কিছু ঠিকঠাক আছে। শুধু তার একটি মোবাইল ও টাকার ব্যাগটি পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে রহিমা বেগমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজ কক্ষে কুপিয়ে ও কলা কেটে হত্যা করে বাথরুমে লাশ রেখে খুনিরা বীরদর্পে গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সন্দেহজনক ভাবে জিজ্ঞাবাদের জন্য ইস্পাহানি কোম্পানীর ম্যানেজার ও ড্রাইভারকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।