তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা :
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নৌকা, স্পিডবোট দিয়ে দলবেঁধে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরতে। করোনাকালীন এই সময়ে এখানে এসে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ফলে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি।
মাসখানেক ধরে তাহিরপুর উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা না থাকলেও যে হারে পর্যটক আসছে এতে করে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসীরা।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কায় গত প্রায় ৫ মাস ধরে পর্যটকশূন্য ছিল তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর, ট্যাকেরঘাট, বারেকের টিলা, যাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগানে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন পর্যটকরা।
এছাড়াও তাহিরপুর উপজেলার স্থানীয় এলাকাবাসী ও তাহিরপুর উপজেলার বাজারের নৌকাঘাট ও থানার ঘাট থেকে স্পিডবোট দিয়ে যাতায়াত করছেন পর্যটকগণ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও বাধা না থাকায় তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাংগুয়ার হাওর, ট্যাকেরঘাট এলাকায় শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক), বারেকের টিলা, যাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগানে শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় পর্যটক বেশি এসেছেন। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই পর্যটকদের মধ্যে। স্পিডবোট ও বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় দলবদ্ধভাবে এসেছেন সবাই। রাত্রিযাপনও করছেন নৌকাতেই। মাস্ক বা শারীরিক দূরত্ব কেউই মানছেন না।
নেত্রকোণা থেকে ঘুরতে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, করোনাকালীন সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমরা বন্ধুরা মিলে দুই নৌকা করে প্রায় ৩৫ জন ঘুরতে এসেছি। আমি আগেও এসেছিলাম টাংগুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক, বারেকটিলায়। এই জায়গাগুলো খুব সুন্দর জায়গা। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঘোরাফেরা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন দাস জানান, এক সপ্তাহ ধরে নৌকা, স্পিডবোট দিয়ে দলবেঁধে আসছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। দিন দিন এই করোনাকালীন সময়ে পর্যটকদের আগমন স্থানীয়দের হুমকির মুখে ফেলছে। এভাবে পর্যটকদের আগমন বাড়তে থাকলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে দ্রুত করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে এখনই প্রশাসনিক কঠোর নজরদারি না বাড়ালে তাহিরপুরকে করোনার কঠিন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্দু বাবুল চৌধুরী বলেন, এ উপজেলায় করোনার কারণে পর্যটকদের আগমনে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে যদি এভাবে পর্যটক আসতে থাকে তাহলে আমাদের তাহিরপুরবাসীর জন্য করোনা মোকাবেলা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তবে যারাই আসেন তারা যেন নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসেন এ ব্যাপারে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে পর্যটকদের বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, উপজেলায় করোনা সংক্রমণের শুরুতেই করোনা প্রতিরোধ উপজেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটে পর্যটকদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটক আগমন নিষেধ থাকা সত্ত্বেও যারা আসছেন তারা ব্যক্তিগতভাবেই আসছেন। অভিযান চলাকালে কোনো পর্যটককে পর্যটনস্পট পেলে তাদের আইনের আওতায় এনে জরিমানা করা হবে।