সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ॥ নানা কৌশলে পদ দখল করে সংগঠনের অর্থ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছেন ফলিক

18
সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুল মুহিম।

স্টাফ রিপোর্টার :
সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ ও শ্রমিক স্বার্থপন্থি কার্যকলাপের অভিযোগ এনে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির পদ থেকে সেলিম আহমদ ফলিককে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা। নেতৃবৃন্দ আরও অভিযোগ করে বলেন, নানা কৌশলে দীর্ঘদিন পদ দখল করে সংগঠনের অর্থ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছেন ফলিক।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মুহিম বলেন, সম্প্রতি আমাদের পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বড় ধরণের একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সংগঠনের কার্যকরি কমিটির এক সভায় কার্যকরি পরিষদের সিংহভাগ নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তে এবং সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ৬০ শতাংশ শ্রমিকদের স্বাক্ষরিত আবেদনের প্রেক্ষিতে সেলিম আহমদ ফলিককে সর্বসম্মতিক্রমে সংগঠনের সভাপতি পদ থেকে এবং সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি কার্যকরি সভাপতি মো. রুনু মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বছরের পর পর সেলিম আহমদ ফলিক নানা কৌশলে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদটি দখল করে ছিলেন। এই সময়ে তিনি সংগঠনকে ও সংগঠনে জমাকৃত শ্রমিকদের অর্থকে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের সাধারণ সভার পরে অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ ৭ লক্ষ ৪০ হাজার ৭৮৮ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার কথা থাকলেও জমা না করে ফলিক নিজের ব্যক্তিগত কাজে লাগিয়েছেন। এরপর প্রতিমাসে উদ্ধৃত ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা জমা হওয়ার কথা। প্রতিমাসে আয়-ব্যয়ের হিসেব করে হিসাব শিট পাই। কিন্তু আমাদেরকে কখনও ব্যাংক ডকুমেন্টস দেয়া হয়না। এসব বিষয়ে নিয়ে আমরা প্রতিবাদী হলে সেলিম আহমদ ফলিক ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। কখনও সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ, কখনও তার ব্যক্তিগত অসুবিধা দেখান। এরই মাঝে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ সম্পাদক রাকিব উদ্দিন রফিক মৃত্যুবরণ করেন। তার শূন্যপদে ২৩ মার্চ থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাই আমি মো. আব্দুল মুহিম। এরপরে অ্যাকাউন্টে আমার নাম সংযুক্ত হয় চলতি বছরের ১৩ মে থেকে। এরপরই ধরাপড়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নানারকম অনিয়মের তথ্য। স্টেটমেন্ট থেকে দেখা যায় শ্রমিকদের টাকা সেলিম আহমদ ফলিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনোয়োগ করেছেন। ২০১৯ সালের ২১ জুলাই তার ছেলে আমিরুল ইসলাম লিমন নামে ১২ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নেন।
আব্দুল মুহিম আরও বলেন, করোনা মহামারীর কারণে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে খাদ্যসামগ্রী প্রদানের জন্য সেলিম আহমদ ফলিককে অনুরোধ করলেও তিনি অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয় নিয়ে তিনি ফোনে শ্রমিক নেতাকে গালিগালাজও করেন। এমন আচরণের প্রতিবাদে ও অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন সাধারণ শ্রমিকরা। তাদেরকে বুঝিয়ে বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে জেলা শাখার অন্য নেতারা মিলে একটি সভার আয়োজন করেন। জেলা পরিবহন শ্রমিক নেতাদের উপস্থিতিতে সভাতেও হামলা চালানো হয়। ফলিকের এমন আচরণে সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
আব্দুল মুহিম বলেন, বর্তমান কমিটির ২৯ মাসে আমাদের সংগঠনের মোট তহবিল ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা হয়। এর সাথে আরও ৪৫ লাখ টাকাও রয়েছে যা ব্যাংক থেকে চেক ডিজওনার হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের তহবিলের টাকা পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু এরমধ্যে তার কাছ থেকে মাত্র ৪১ লক্ষ টাকার হিসেব বুঝে পেয়েছি। বাকি অর্থের কোন হিসেব বুঝে পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুনু মিয়া, সহ-সভাপতি শাহ জামাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাজী ময়নুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত, কোষাধ্যক্ষ শামসুল হক মানিক, প্রচার সম্পাদক সুনাফর আলী লাকি, সদস্য আতিক মিয়া, বেলাল আহমদ ও হারিছ মিয়া।