খামার শিল্প রক্ষায় পদক্ষেপ

6

গরু পালনে বাংলাদেশে এক নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও কোরবানির ঈদে কিংবা অন্যান্য সময়ও ভারতীয় গরু না এলে বাজারে রীতিমতো হাহাকার উঠত। এখন একটি ভারতীয় গরু না এলেও বাজারে গরুর অভাব হয় না। দেশে বর্তমানে পাঁচ লাখ ২২ হাজার গবাদি গরুর খামার রয়েছে। এ ছাড়া অনেক কৃষক নিজ বাড়িতে দু-একটি করে গরু পালন করে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, গত বছর কোরবানির ঈদের সময় কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৮ লাখ। কোরবানির ঈদে গরু জবাই হয়েছিল এক কোটি ছয় লাখ। তার অর্থ ১২ লাখ গরু অবিক্রিত থেকে গিয়েছিল। এ বছর ধারণা করা হচ্ছে কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এর কারণ করোনা মহামারির কারণে গত তিন মাস বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল অনেক কম, বিক্রিও কমেছে ৩০ শতাংশের মতো। এই ৩০ শতাংশ গরুও আসবে কোরবানির হাটে। তদুপরি নতুন নতুন খামারও গড়ে উঠেছে গত এক বছরে। এখন এই দেড় কোটি গরুর একটি বড় অংশ শুধু থেকেই যাবে না, আশঙ্কা করা হচ্ছে গরুর দামও কমে যাবে। ফলে খামারি থেকে প্রান্তিক কৃষক সবাই বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
অনেক কৃষক সারা বছর ধরে একটি বা দুটি গরু পালন করে কোরবানির ঈদের সময় বিক্রি করেন কিছুটা সচ্ছলতা পাওয়ার জন্য। খামারিরাও কয়েক মাস ধরে গরু মোটাতাজা করে কিছুটা লাভের আশায়। এ বছর করোনার কারণে বাজারে গোখাদ্যের স্বল্পতা থাকায় দামও ছিল অনেক বেশি। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িতরা আশঙ্কা করছেন, এ বছর কোরবানির গরু বিক্রি ২৫ শতাংশের মতো কমে যেতে পারে এবং দাম কমতে পারে ২০ শতাংশের মতো। তদুপরি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যেতে পারে। এমন হলে খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। অনেকে গরু পালনে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন। আর তার প্রভাব পড়বে দেশের বিকাশমান পশু খামারশিল্পে।
দেশের পাঁচ লাখের বেশি খামারির সর্বস্বান্ত হওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তা থেকে তাদের কিভাবে রক্ষা করা যায় তার উপায় খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে এই শিল্পের স্থায়িত্ব ও উন্নয়ন নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। দেশীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে মাংস রপ্তানি করা যায় কি না তা নিয়েও ভাবতে হবে। সবার আগে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের রক্ষা করতে হবে।