সৌদি আরবের বাইরের কেউ এবার হজ্বে যেতে পারবেন না

35

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এবার সৌদি আরবে যারা অবস্থান করছেন, শুধু তারাই হজ্ব করার সুযোগ পাবেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। সোমবার সৌদি আরবের হজ্ব এবং ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেয়। তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে এ বছর বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ্বে যেতে পারবেন না সৌদি আরবের এমন ঘোষণায় হতাশ হয়ে পড়েছেন হজ্বযাত্রীরা। বিশ্বব্যাপী করোনার ছোবলে এবার শুধু সৌদি আরবে অবস্থানরতদের মাঝেই সীমিতাকারে হজের সিদ্ধান্তে হজ্বযাত্রীদের মাঝে এমন বিপর্যয় নেমে আসে। এদিকে যারা এবার হজ্বে প্রাক নিবন্ধন করেছেন তাদেরকে হয় অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী বছরের জন্য; নয় টাকা উত্তোলন করে নিতে পারবেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে- কেউ টাকা ফেরত নিতে চাইলে কিভাবে সেটা দেয়া হবে- এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আজ (বুধবার) জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। হাব সভাপতি শাহাদত হোসাইন তসলিম এমনই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। তবে সৌদি আরব সারাবিশ্বের মানবজাতির কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সব কিছু মেনে চলব।
সৌদি আরবের ঘোষণায় বলা হয়, শুধু সৌদি আরবে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিক এবং সৌদি নাগরিকরা এবারের হজ্ব পালন করতে পারবেন। অন্য কোন দেশ থেকে কেউ এবার হজ্ব করতে আসতে পারবেন না। করোনা মহামারীর জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি সরকার। গতবছর বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হজ্ব করেছিলেন। কিন্তু এবার বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর ব্যাপকতায় হজ্বের পরিসর সীমিত করা হয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, দুনিয়াব্যাপী করোনা তান্ডবের দরুন এবার হজে এক হাজারের কম লোক অংশ নেবেন। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়Ñ সোমবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে টেলিফোন করেন। এ সময় করোনাভাইরাসের কারণে ঐতিহ্যগত হজ্ব বাতিলের বিষয়ে অবহিত করেন। এবার হজ্বে এক হাজারের কম লোক (দেশী- বিদেশী) অংশ নেবেন বলে জানান সৌদির মন্ত্রী। ড. মোমেন এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মতে, এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজ্বে যাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে গত ২৪ ফেব্র“য়ারি হজ্ব প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব। পরে বার বার নিবন্ধন ও প্রাক নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়। এতে বাংলাদেশের সব কোটার বিপরীতে টাকা সংগ্রহ করা হয়। সরকারী ব্যবস্থাপনায় (ব্যালটি) গমনেচ্ছুরা প্যাকেজের সব টাকাই জমা দিয়েছেন। বেসরকারী (নন-ব্যালটি) ব্যবস্থাপনায় হজ্বে যেতে ইচ্ছুকরা পুরো প্যাকেজের অর্ধেক টাকা জমা দেন। কিন্তু করোনা তান্ডবে দুনিয়ার সব ওলটপালট হয়ে গেলেও হজ্বযাত্রীরা এতদিন ধৈর্য ধরেছিলেনÑ শেষ মুহূর্তে হলেও একটা সুখবর আসবে সৌদি আরব থেকে। কিন্তু সোমবার রাতে সৌদি আরবের হজ্ব সংক্রান্ত খবরটি বাংলাদেশের হজ্বযাত্রীদের মাঝে চরম দুঃসংবাদ হিসেবে নেমে আসে। অনেক হজ্বযাত্রীকেই মঙ্গলবার তাদের এজেন্সির কাছে হজ্বের পরবর্তী করণীয় বিষয় সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে দেখা গেছে। তাদের অনেককেই টাকা ফেরতের বিষয়েও নিজ নিজ এজেন্সির প্রতিনিধির কাছে ধর্ণা দিতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ্ব সংক্রান্ত সরকারের অন্যতম নীতিনির্ধারক সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন বলেন, সৌদি আরব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্যই। বিশ্ব মহামারীর মাঝে যদি এবার হজ্ব হতো, তাহলে কি বাংলাদেশী হজ্বযাত্রীদের সেখানে পাঠানো ঠিক হতো? স্বাস্থ্য নিরাপত্তার এমন নিশ্চিত ঝুঁকির মাঝে তাদের পাঠানো হলেও সেটা নিয়েও কথা উঠত। কাজেই আমি মনে করি- সৌদি আরব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের মানবজাতির কল্যাণেই। তবে এ সিদ্ধান্তের দরুন বাংলাদেশের যারা টাকা জমা দিয়েছেন তারা যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ আগামী বছর যেতে না পারলে দ্রুত টাকা ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আগামীবারের জন্য ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিতে হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার হঠাৎ ঘোষণা আসেÑকরোনা তান্ডবের দরুন এবার শুধু সৌদি আরবে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিক এ মৌসুমে হজ্বে অংশ নিতে পারবেন। তাই এবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোন দেশের নাগরিকই হজ্বে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি হজ্বে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও হবে সীমিত। এ বিষয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ্ব অফিসের কাউন্সিলর (হজ্ব) মোঃ মাকসুদুর রহমান ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেনÑ সৌদি আরবের হজ্ব ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় আমাদের অফিসিয়ালি জানিয়েছে। ফলে তাদের এ সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ থেকে কেউ আর হজ্বে যেতে পারছেন না। শুধু বাংলাদেশ নয়, সৌদি আরবের বাইরে থেকে কেউ এসে হজ্বে অংশ নিতে পারবেন না। গত বছর ২৫ লাখ মুসলমান হজ্বে অংশ নিয়েছিলেন। তবে এবার সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তের কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে হজ্বে অংশ নেয়ার সুযোগ আর থাকছে না।
সৌদি আরব জানিয়েছে, বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় পাঁচ লাখ। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন না থাকায় শঙ্কা কমছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যে কোন ধরনের ভিড়ের কারণে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে, এজন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরী। সকল মুসলমানের নিরাপদে হজ্ব ও ওমরাহ পালন নিশ্চিত করাকে গুরুত্ব দেয় সৌদি আরব। ওমরাহ ও হজ্বপালনকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওমরাহ পালন স্থগিত করা হয়েছে পবিত্র স্থান ও হজ্বযাত্রীদের সুরক্ষার জন্য। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এ বছর হজ্ব অনুষ্ঠিত হবে খুবই সীমিতসংখ্যক হাজী নিয়ে। তবে বিভিন্ন দেশের নাগরিক যারা সৌদি আরবে আছেন তারা হজ্বে অংশ নিতে পারবেন। এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যেন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে হজ্ব আয়োজন করা সম্ভব হয়। ইসলামে মানুষের জীবন রক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেই শিক্ষা থেকেই এ সিদ্ধান্ত। সৌদি সরকার দুটি পবিত্র মসজিদের সংরক্ষণকারী, একই সঙ্গে মিলিয়ন হজ ও ওমরাহ পালনকারীকে সেবা দেয়। যারা হজ্বে অংশ নেবেন তাদের সুরক্ষায় সৌদি সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে এবার যারা হজ্বের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন তারা কিভাবে সেটা ফেরত পেতে পারেন জানতে চাইলে হাব সভাপতি শাহাদত হোসেন তসলিম বলেন, অপেক্ষা করতে হবে। যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের টাকা গচ্ছিতই থাকবে। কেউ হাত দিতে পারবে না। যদি কোন হজ্বযাত্রী আগামী বছর হজ্বে যাবেন বলে নিয়ত করেন তিনি টাকা ফেরত নিতে পারবেন। আবার তিনি চাইলে আগামী বছর যেতে চাইলে পারবেন। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। টাকা কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় ফেরত প্রদান করা হবে এসব বিষয়ে আজ বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আমাদের সবার উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকা হয়েছে। পরবর্তী করণীয় নিয়ে আজ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।