সিলেট বিভাগে ৭৮ জন সহ সারা দেশে ৩ হাজার ১৬৪ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মী করোনায় আক্রান্ত

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের তিন হাজার ১৬৪ জন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক এক হাজার তিনজন, নার্স ৮৫৩ এবং স্বাস্থ্যকর্মী এক হাজার ৩০৮ জন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৩৩ জন চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) শনিবার চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ৫৮৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৯, খুলনা বিভাগে ৫০, রাজশাহী বিভাগে ১৮, রংপুর বিভাগে ২৯, সিলেট বিভাগে ৭৮ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১১৮ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া নার্সদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫০৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১৮, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৯, খুলনা বিভাগে ২৬, রাজশাহী বিভাগে ২১, রংপুর বিভাগে ৩১, সিলেট বিভাগে ৬৩ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১১৮ জন আক্রান্ত হন।
পরিসংখ্যান অনুসারে, ঢাকা বিভাগে ৫৫৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫৮, খুলনা বিভাগে ৭২, রাজশাহী বিভাগে ৩৪, রংপুর বিভাগে ৫১, সিলেট বিভাগে ৯৯ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
কোন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কতজন আক্রান্ত
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৪ জন, মিটফোর্ডে ৫৬, শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে ১০৩, আজগর আলী হাসপাতালে ২১, বিএসএমএমইউতে ছয়, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ৯, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ১১, শিশু হাসপাতালে ছয়, জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে ১০, নিউরো সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১১, অ্যাপোলো হাসপাতালে পাঁচ, বারডেম হাসপাতালে সাত, ইউনিভার্সেল হাসপাতালে তিন, পঙ্গু হাসপাতালে ৯, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ৯ এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ১৩ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন।
তাছাড়া এ পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও পাঁচজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
এসব চিকিৎসকদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।
শনিবার এক শোকবার্তায় তারা বলেন, তাদের জন্য কান্না নয় বরং তাদের বীরত্বগাথা ও সাহসী আত্মোৎসর্গ আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। আমাদের আগামীর দুর্গম যাত্রায় তারা পথ দেখিয়েছেন। এই চিকিৎসকদের আত্মার শান্তি কামনা এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা।
গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত চিকিৎসকদের মধ্যে তিনিই প্রথম।
এরপর ৩ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) মো. মনিরুজ্জামান। ১৩ মে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অধ্যাপক ডা. আবুল মোকারিম মো. মোহসিন উদ্দিন।
এফডিএসআর বলছে, গত ১৮ মে মারা যান ডা. আজিজুর রহমান রাজু, ২২ মে মারা যান মৌলভীবাজারের প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. এমএ মতিন, ডা. কাজী দিলরুবা খানম। ২৬ মে মারা যান সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রহমান,গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনা খান। ২৭ মে মারা যান অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন এবং ৩০ মে মারা যান ডা. সাইদুর রহমান।
যক্ষ্মারোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ বাবলু ১ জুন মারা যান, ২ জুন মারা যান প্রখ্যাত ইউরোলজিস্ট ডা. মঞ্জুর রশীদ চৌধুরী, ৩ জুন মারা যান চট্টগ্রামের মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. এহসানুল করিম।
একই দিনে মারা যান ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন ও ডিজি হেলথের অবসরপ্রাপ্ত ইভালুয়াটার অফিসার ডা. একেএম ওয়াহিদুল হক।
৪ জুন মারা যান ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. মুহিদুল হাসান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এস এ এম গোলাম কিবরিয়া।
আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া পাঁচ চিকিৎসক হলেন- অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম, অধ্যাপক (অব.) আনিসুর রহমান, ডা. সারওয়ার ইবনে আজিজ, ডা. সৈয়দ জাফর রুমি ও ডা. তাজউদ্দিন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে করোনায় আটজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। এরপর জুনের প্রথম ১২ দিনেই মারা গেছেন ১৯ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে ৩, ৪ ও ১২ জুন এই তিন দিনেই মারা গেছেন নয়জন চিকিৎসক, প্রতিদিন তিনজন করে চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। আর মে মাসে চারজন এবং জুন মাসে একজন চিকিৎসক কোভিড-১৯ এর লক্ষণ নিয়ে জন মারা যান।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে নতুন এ করোনাভাইরাসে প্রথম সংক্রমণ নিশ্চিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগীশনাক্ত হন ৮ মার্চ এবং এ রোগে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ১৩ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৮৪ হাজার ৩৭৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১ হাজার ১৩৯ জন। এ পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার ৮২৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।