সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ চতুর্থ শ্রেণীর (আউট সোর্সিং) পদে কর্মরত আয়া, ওয়ার্ডবয় ও পরিছন্নকর্মীসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত মোট ২৩৪ জন কর্মচারীর ১২ মাসের বেতনভাতা পরিশোধ না করেই নতুন করে আউট সোর্সিংয়ে লোকবল নিয়োগ টেন্ডারের প্রতিবাদে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের ধরপাকড় ও লাঠিপেটায় ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ৪ নারী ও ২ পুরুষ কর্মীকে আটক করেছে।
রবিবার দুপুর ১২টায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে আউট সোর্সিং পদে কর্মরতরা তাদের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ করার জন্য সিভিল সার্জন ডাঃ শামস উদ্দিনের নিকট দাবী জানান। ক্ষুব্ধ কর্মচারীরা তাদের নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে লোকবল নিয়োগের নামে টেন্ডার প্রক্রিয়া পরিচালনা করার অভিযোগে সিভিল সার্জন কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় আতংকিত সিভিল সার্জন পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ৬ জনকে আটক করে।
বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, মোছাঃ সখিনা বেগম, সালমা বেগম, সতী রানী দাস, লক্ষ্মী বেগম, জোৎস্না বেগম ও রাহেলা বেগম প্রমুখ কর্মচারীরা। তারা বলেন, আমরা বর্তমান প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস চলাকালেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু গত ১২ মাস ধরে হাসপাতালগুলোতে কাজ করে গেলেও আমাদের বেতনভাতা বন্ধ থাকায় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানববেতর জীবনযাপন করছি। তারা নতুন করে আউট সোর্সিংয়ে লোকবল নিয়োগ টেন্ডারের কার্যক্রম বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন আউট সোর্সিয়ের প্রাক্তন কর্মীদের নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রাক্তন কর্মীরা যাতে বকেয়া সম্পূর্ণ বেতন পায় তার জন্য বিল করে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে ২০১৯ সালে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির সমমানের আউট সোর্সিয়ের মাধ্যমে প্রায় ২৩৪জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ লাভের পর কর্মচারীরা মাত্র ২ মাসের বেতন পেয়েছে। তবে নিয়োগের সময় সরকারি পদের বিপরীতে আউট সোর্সিংয়ে লোক নেওয়ায় বেতন নিয়ে জটিলতা দেখা গিয়েছে। নিয়ম না মেনে নিয়োগ দেওয়ায় এখন মন্ত্রণালয় বেতন ছাড় দিলেও বেতন প্রদান নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ আছে ওই সময় নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। এদিকে চুক্তি মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আবারও সিভিল সার্জন কার্যালয় লোক নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। ৭ জুন রবিবার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। ওইদিন নিয়োগের দরপত্র দাখিলের খবর পেয়ে সকাল থেকেই সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ভিড় করেন গত বছরের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা। তারা বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করেন। ক্ষুব্ধ কর্মীরা তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে মিছিলও করেন। খবর পেয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে এই বিক্ষোভের মধ্যেই একাধিক প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও সুনামগঞ্জ বিএমএর সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাস বলেন, আউট সোর্সিয়ের কর্মীরা নৈতিকভাবে বেতন পাবার অধিকার রাখেন। তারা গত এক বছর কাজ করেছেন। কিন্তু বেতন পেয়েছেন মাত্র দুই মাসের। তবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও যতদূর জানি তাদের বেতনের জন্য কাজ করছেন। আনুষঙ্গিক কাগজপত্র তৈরি করে পাঠিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন বলেন, আউট সোর্সিং প্রক্রিয়ায় জনবল নিয়োগের দরপত্রে অংশ নিয়েছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। আগের নিয়োগের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন করে আইনগতভাবেই নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়েছেন সাবেক কর্মীরা। আমরা ইতোমধ্যে তাদের সবার বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য বিল প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শহীদুর রহমান জানান, হাসপাতালগুলোতে আউট সোর্সিং পদে সরকারীভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া পরিচালনাকালে আন্দোলনকারীরা সরকারী প্রতিষ্ঠানে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করার ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত বলেও তিনি জানান।