প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় ॥ সিলেট-সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জ- মৌলভীবাজার রেড জোনে, হবে পুরোপুরি লকডাউন

32

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জোনভিত্তিক (রেড, ইয়েলো এবং সবুজ) লকডাউন ঘোষণার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে। সম্মতি পেলেই জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠানো হয়েছে, যা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে লকডাউনের ধরণ অনুযায়ী জোনভিত্তিক একটি তালিকা দেয়া রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকার ৩৮টি এলাকাকে ইয়েলো জোনে (আংশিক লকডাউন) এবং গ্রীণ জোনে (লকডাউন নয়) ১১টি এলাকাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত রেড জোনে (পুরোপুরি লকডাউন) কোন এলাকাকে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। আর দেশের তিনটি বিভাগ, ৫০টি জেলা ও ৪০০টি উপজেলাকে রেড জোনে এবং পাঁচটি বিভাগ, ১৩টি জেলা ও ১৯টি উপজেলাকে ইয়েলো জোনে দেখানো হয়েছে। একটি জেলা ও ৭৫টি উপজেলাকে দেখানো হয়েছে গ্রিন জোনে।
রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পরেই জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রম শুরু করা হবে। এর আগে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। তিনি জানিয়েছেন, আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রধানদের সমন্বয়ে একাধিক সভা করেছি। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাংশ তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠিয়েছি। আমাদের তৈরি করা সারাংশতে উল্লেখিত প্রস্তাব বা সিদ্ধান্তগুলো যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সেটি বাস্তবায়ন করব। পরীক্ষামূলক বলেন আর চূড়ান্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পরেই তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্রম অবনতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর গত ১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা সভায় বসেন। ওই সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার কথা জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক (জোন) লকডাউন শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী সরকার রেড, ইয়েলো ও গ্রিন-এই তিনটি জোনে চিহিৃত করবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আধিক্য থাকা এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে তা লকডাউন করে দেবে সরকার। আগামী দু’একদিনের মধ্যে ঢাকায় সীমিত পরিসরে পাইলট করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী হিসেবে এলাকাভিত্তিক লকডাউন শুরু হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আগামী সপ্তাহে লকডাউন এলাকার পরিধি বাড়ানো হবে। খুব বড় এলাকায় হয়ত এটা করা হবে না। শহরে ওয়ার্ড বা মহল্লাভিত্তিক রেড জোন ঘোষণা করে তা ব্লক করে দেয়া হবে। এবার লকডাউন এলাকায় সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। একান্ত প্রয়োজন না থাকলে কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না। ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিসের দরকার হবে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নে একটি এ্যাপও তৈরি করা হয়েছে। করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের উর্ধগতির লাগাম টেনে ধরতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা আক্রান্তমুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়োলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। একটি এলাকা চিহ্নিত করে সেখানকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে কতজন মানুষ আক্রান্ত রয়েছে, সেই অনুযায়ী রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে সেটি পড়বে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও করোনা সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মোঃ হাবিবুর রহমান খান জানান, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সরকারের আন্তরিকতার কমতি নেই। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিনিয়ত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছে সরকার। ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী রেড, ইয়েলো ও গ্রিন-এই তিনটি জোনে চিহ্নিত করে লকডাউন দিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আধিক্য থাকা এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে তা লকডাউন করে দেবে সরকার। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকায় সীমিত পরিসরে এলাকাভিত্তিক পাইলট করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী হিসেবে লকডাউন শুরু হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আগামী সপ্তাহে লকডাউন এলাকার পরিধি বাড়ানো হবে। যে এলাকা রেড জোন ঘোষণা করা হবে, সেই এলাকা সম্পূর্ণ ব্লক রাখা হবে। সেই এলাকায় কেউ ঢুকবেও না, কেউ বেরও হবে না। ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিসের দরকার হবে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও জানান, জোনভিত্তিক এলাকায় নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর হয়ে ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকার ৩৮টি ইয়েলো জোনের এলাকাসমূহ : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী আংশিক লকডাউন বলে চিহ্নিত ৩৮টি এলাকা হলো- আদাবর, থানা, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, ওয়ারী, কদমতলী, কলাবাগান, কাফরুল, কামরাঙ্গীরচর, কোতয়ালি, খিলক্ষেত, গুলশান, গেন্ডারিয়া, চকবাজার, ডেমরা, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, দক্ষিণখান, দারুসসালাম, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, পল্টন মডেল, পল্লবী, বংশাল, বাড্ডা, বিমানবন্দর, ভাটারা, মিরপুর মডেল, মুগদা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, রমনা মডেল, লালবাগ, শাহআলী, শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর, সবুজবাগ, সুত্রাপুর ও হাজারীবাগ থানা এলাকা।
ঢাকার গ্রিন জোনের এলাকাসমূহ : লকডাউন নয় বলে চিহ্নিত ১১টি এলাকা হলো- উত্তরখান থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, খিলগাঁও, তুরাগ, বনানী, ভাষানটেক, মতিঝিল, রামপুরা, রূপনগর, শাহবাগ ও শ্যামপুর থানা এলাকা।
ঢাকা সিটির বিভিন্ন এলাকায় রোগীর সংখ্যা : আইইডিসিআর জানায়, মিরপুরে ৬৫৪ জন, মহাখালীতে ৪৬৬ জন, উত্তরায় ৪৪৮, মুগদায় ৪৩৩, মোহাম্মদপুরে ৪১০, যাত্রাবাড়ীতে ৩৯৬ জন, কাকরাইলে ৩০০ জন, ধানমন্ডি ৩১১ জন, মগবাজার ২৬০ জন, তেজগাঁও ২৬০ জন, রাজারবাগে ২২২ জন, লালবাগে ২১০ জন, রামপুরা ২০৮ জন, বাড্ডা ২০০ জন, মালিবাগে ১৭০ জন, গুলশান ১৬৮ জন, বাবুবাজারে ১৬২ জন, গেন্ডারিয়া ১৪৫ জন, ওয়ারীতে ১২৭ জন, বাসাবোতে ১২৯ জন, বংশালে ১১২ জন, আগারগাঁওয়ে ১০৯ জন, আজিমপুরে ৯৪ জন, চকবাজারে ৮২ জন ও আদাবর এলাকায় ৮০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
রেড জোনে তিনটি বিভাগ, ৫০টি জেলা ও ৪শ’টি উপজেলা :দেশের তিনটি বিভাগ, ৫০টি জেলা ও ৪০০টি উপজেলাকে রেড জোনে (পুরোপুরি লকডাউন) এবং পাঁচটি বিভাগ, ১৩টি জেলা ও ১৯টি উপজেলাকে ইয়েলো জোনে (আংশিক লকডাউন) দেখানো হয়েছে। একটি জেলা ও ৭৫টি উপজেলাকে দেখানো হয়েছে গ্রিন জোনে (লকডাউন নয়)।
চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে রেড জোনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ফেনী, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী এবং ইয়েলো জোনে রয়েছে চট্টগ্রামের বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি।
বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে রেড জোনে রয়েছে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর এবং ইয়েলো জোনে রয়েছে ভোলা ও ঝালকাঠি।
রেড জোনে রয়েছে ঢাকা বিভাগের গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইলকে এবং ইয়েলো জোনে রয়েছে ঢাকা ও ফরিদপুর জেলা।
খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে রেড জোনে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, মেহেরপুর, নড়াইল ও সাতক্ষীরা এবং ইয়েলো জোনে বাগেরহাট, কুষ্টিয়া ও মাগুরাকে। আর গ্রিন জোনে রয়েছে ঝিনাইদহ জেলা।
রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে রেড জোনে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী এবং ইয়েলো জোনে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ।
রংপুর বিভাগের আটটি জেলাকেই পুরোপুরি লকডাউন বলা হচ্ছে। জেলাগুলো হলো- দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও।
সিলেট বিভাগের সবক’টি জেলাকেই বলা হচ্ছে পুরোপুরি লকডাউন। বিভাগের জেলাগুলো হলো- হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট।
ময়মনসিংহ বিভাগেরও সবক’টি জেলাকে পুরোপুরি লকডাউন বলা হচ্ছে। এ চারটি জেলা হলো জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুর।